মধ্যযুগে ইউরোপের চারু ও কারুশিল্পের অনুপম নিদর্শনগুলোর অধিকাংশই ছিল বিশ্বপ্রভুর মহিমা কীর্তনে নিবেদিত। এক হাজার সালের দিকে স্থাপত্যশিল্পে রোমানেস্ক নামে বিশেষ এক স্টাইল গড়ে ওঠে। এই শিল্পরীতিতে নির্মিত ভবনগুলো ছিল বিশাল; এতে থাকত মোটা মোটা থাম ও গোলাকার খিলান। ১১শ সালের দিকে স্থাপত্যশিল্পে আরও হালকা ধরনের নির্মাণরীতি গড়ে ওঠে, যাকে আমরা এখন বলি গথিক স্টাইল। এই রীতির বৈশিষ্ট্য ছিল সূচ্যগ্র খিলান ও সরু থাম। গির্জা বা ক্যাথেড্রালগুলোতে এই শিল্পরীতি ব্যবহারের ফলে সেগুলো হয়ে ওঠে অপূর্ব সুষমাম-িত।
এই যুগের চিত্রশিল্পীদের লক্ষ্য ছিল বাস্তবধর্মী চিত্র অঙ্কন এবং পূর্ব ইউরোপীয় শিল্পরীতির (বাইজেন্টাইন) প্রভাবে তারা ব্যবহার করতেন উজ্জ্বল রং। মঠের সন্ন্যাসীরাও তাদের পান্ডুলিপিতে ব্যবহার করতেন সুন্দর সুন্দর চিত্র। এসব সত্ত্বেও সে সময়ের শিল্পীরা চিত্রানুপাতের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি।
সঙ্গীতের ক্ষেত্রে মধ্যযুগে প্রাধান্য ছিল সাদামাটা গানের, পরে অবশ্য সুরস্রষ্টারা একাধিক সুরের মিশ্রণে গানের এক নতুন ধারা তৈরি করেন। এটি তখন পরিচিত হয়ে উঠে ‘নিউ আর্ট’ বা ‘নতুন শিল্প হিসাবে।
সাহিত্যে ছিল পদ্যের প্রাধান্য। পদ্যাকারে রচিত গাথার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল ভাইকিংদের গল্প, নাইটদের রোমান্স, রাজা আর্থার বা শার্লমেনের বীরত্বের কাহিনী। মধ্যযুগের শেষ দিকে রচিত হয় সংক্ষিপ্তাকারের লিরিক কবিতা; এগুলোর স্রষ্টা ইতালির দান্তে ও পেত্রার্চ। ইংল্যান্ডের চসার তার রচিত পদ্যে সুকৌশলে তুলে আনেন তল্কালীন সমাজ ও মানুষের জীবন।
সেলজুক তুর্কি সেলজুক তুর্কিরা ছিল যাযাবর। তাদের নেতা ছিলেন সেলজুক। ৯০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে ওরা বাস করত বুখারায় (এখনকার উজবেকিস্তান)। তারা ছিল যোদ্ধাজাতি। তাদেরই একটি অংশ নতুন রাজ্য জয়ের আশায় সুদূর পশ্চিমে মাত্রা শুরু করে।
১০৭১ খ্রিস্টাব্দে তাদের নেতা আলপ আরসালান (সিংহ বীর হিসাবে পরিচিত) সেলজুকদের নিয়ে আসেন আর্মেনিয়ায়। সম্রাট চতুর্থ রোমানাস ডাইয়োজেনেসের নেতৃত্বে বাইজেন্টাইন বাহিনী তাদের আক্রমণ করে। এই আক্রমণ বাইজেন্টাইনদের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে। তুর্কিরা তাদের পরাস্ত করে এবং সম্রাটকে বন্দি করে। প্রচুর অঙ্কের মুক্তিপণের বিনিময়ে সম্রাট ছাড়া পান। এই যুদ্ধের পরই এশিয়া মাইনরে বাইজেন্টাইনদের শক্তি খর্ব হয়ে যায় এবং তুর্কিরা তাদের সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। আলপ আরসালানের পুত্র মালিক শাহর সময় (১০৫৫-১০৯২ খ্রিস্টাব্দ) সেলজুক তুর্কিদের সাম্রাজ্য সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে।