লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি মো. আলাউদ্দিন পাটওয়ারীকে (৪৫) গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাতে নিহতের ছেলে মো. আকাশ বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় মো. নিশান ওরফে ছোট নিশানকে। মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ জনসহ ২৯ জনকে আসামিকরা হয়েছে। শনিবার রাতেই অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আসামি মো. জাবেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত মো. জাবেদ হলো জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমানের চাচাতো ভাই। এ ছাড়া মামলায় জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফরিদ আহমেদসহ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তিন থেকে চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহতের পরিবার জানায়,শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের রশিদপুর গ্রামের পোদ্দার দিঘিরপাড়ে আলাউদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার আগের সময় আলাউদ্দিন মোটর সাইকেল যোগে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে। শব্দ শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাকে পাশের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করে। তারা আলাউদ্দিনকে পোদ্দার বাজারের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, আলাউদ্দিন বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান আবুল কাশেম জেহাদীর চাচাতো ভাই। তিনি কাশেম জেহাদীর সহযোগী হিসেবে পরিচিত আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে দুইটি হত্যা মামলা রয়েছে বলে চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসি মো. মোসলেহ উদ্দিন দাবি করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানাগেছে, শনিবার (১ অক্টোবর) বিকেলে আলাউদ্দিনের মরদেহের দ্বিতীয় নামাজের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুল সংখ্যক লোক মানুষ নেয়। হত্যার ঘটনার পর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজ্জামান আশরাফসহ দলীয় সিনিয়র নেতারা হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন।
দলীয় সূত্রে আরো জানাযায়,লক্ষ্মীপুরে যুবলীগ নেতা মো. আলাউদ্দিন পাটোয়ারীকে (৪৫) গুলি করে হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আলটিমেটামে স্থানীয় বিএনপিকে দায়ী করে চলেছেন। তারা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকেও আল্টিমেটাম দিয়েছেন। তবে বিএনপি নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীর ফাঁসানোর জন্য চক্রান্ত চলছে।
দলীয় সূত্র জানায়, শনিবার দুপুর ২টার দিকে পৌর শহরের আহম্মদীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ও বিকেল ৫টায় রশিদপুর গ্রামের ঈদগাঁহ মাঠে নিহতের নামাজের জানাযা হয়। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু ও সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপিসহ জেলা ও উপজেলা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রেখেছেন। দুপুরে পৌর শহরের বিক্ষোভ মিছিল হয়। এর আগে শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে ও শনিবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।
আওয়ামী লীগ নেতা নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি বলেছেন, বিএনপির সন্ত্রাসীরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করেছে। তারা আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে এটি করেছে। তারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আমাদের নেতাকর্মীদের হুমকি দিচ্ছে। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য দাবি জানিয়েছেন এ নেতা।
লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক হাসিবুর রহমান বলেন, বিএনপি খুনের রাজনীতি করে না। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীর ফাঁসানোর জন্য চক্রান্ত চলছে। এটি আওয়ামী লীগের পুরনো অভ্যাস।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন বলেন,হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্যের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। পূর্বশত্রুতা বা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য,আলাউদ্দিন বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান কাশেম জিহাদীর চাচাতো ভাই। তিনি জিহাদীর সহযোগী ছিলেন। এ ইউনিয়নে জিহাদী ও লাদেন বাহিনীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। ২০১৭ সালে লাদেন বাহিনীর প্রধান লাদেন মাসুদ ক্রসফায়ারে নিহত হন। তবে তাঁর বাহিনীর লোকজন এখনো এলাকায় সক্রিয় আছেন।