খুলনার রূপসা উপজেলার ১০টি স্কুলের পরিত্যাক্ত ভবন ওপেন নিলামের নামে হরিলুট হয়েছে। ১০টি স্কুলের পাকা ১০টি ভবন ৬ লাখ ৭২ হাজার ৮৭৪ টাকা নির্ধারণ করা নিলাম বিক্রি হয়েছে ৬ লাখ ৯৮ হাজার টাকায়। যা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্রেতারা ক্রয় করে ওই দিনই এর চার গুণ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এদিকে সরকারি মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে শুভঙ্করের ফাঁকি দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর আগে উপজেলা পরিষদের বিশাল দুইতলা ভবন চারজন সিন্ডিকেট করে মাত্র তিন লাখ টাকায় ক্রয় করে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়। এভাবে সরকারি ভবন নামমাত্র টাকায় ওপেন নিলামে বিক্রি করায় সিন্ডিকেটকারীরা হচ্ছে আঙুল ফলে কলাগাছ। আর সরকার বঞ্চিত হচ্ছে কাক্সিক্ষত রাজস্ব থেকে। জনমনে সৃষ্টি হয়েছে নানান প্রশ্নের। রূপসা উপজেলার বিভিন্ন স্থানের ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রশাসন। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নামমাত্র দামে কিনে নেয় ভবণগুলি। সূত্র জানায়, উপজেলার ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যাক্ত হওয়ায় নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা নিলাম কমিটি। তারই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় একটি পত্রিকায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ আবদুর রব স্বাক্ষরিত প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রির জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস কক্ষে আগ্রহী প্রার্থীদের আসার আহ্বান জানানো হয়। সেই অনুযায়ী বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক আগ্রহী নিলাম ক্রেতা সেখানে উপস্থিত হলেও প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তি সিন্ডিকেট করে সেখানে কাউকে ঢুকতে দেয়নি। বিধি মোতাবেক সর্বোচ্চ দরদাতাকে নিলাম দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। নামমাত্র ধার্যকৃত টাকা থেকে সামান্য কিছু বেশি দিয়ে কৌশলে সিন্ডিকেটকারীরা ক্রয় করে নেন নিলাম। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারি ভবনের ধার্যকৃত ৬৫ হাজার ১৪৪ টাকার নিলাম ৬৬ হাজার ৫০০ টাকায় আবদুল মজিদ ফকির, উপজেলা সদর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ধার্যকৃত ৬২ হাজার ৯ টাকার নিলাম ৬৪ হাজার ৫০০ টাকায় ইউপি সদস্য আওরঙ্গজেব স্বর্ণ, আনন্দনগর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ধার্যকৃত ৬২হাজার ৯ টাকার নিলাম ৬৫ হাজার টাকায় তাহিদ হোসেন মোল্লা, পাথরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ধার্যকৃত ৫৯ হাজার ৯৫৭ টাকার নিলাম ৬২ হাজার ৫০০ টাকায় মোর্শেদুল আলম বাবু, মায়রাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের (পিছনের দেওয়াল বাদে) ধার্যকৃত ৫৭ হাজার ২৯৬ টাকার নিলাম ৬০ হাজার টাকায় ঠিাকাদার মোঃ আলী জিন্নাহ, নন্দনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ধার্যকৃত ৬০ হাজার ৪৮৭ টাকার নিলাম ৬১হাজার ৫০০ টাকায় সরদার মিজানুর রহমান, সিন্দুকডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ধার্যকৃত ৫৩ হাজার ৫৯৯ টাকার নিলাম ৫৫হাজার ৫০০ টাকায় ঘাটভোগ ইউপি চেয়ারম্যান মোল্যা ওয়াহিদুজ্জামান মিজান, বাগমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের (পিছনের দেওয়াল বাদে) ধার্যকৃত ৫১হাজার ১৪৮ টাকার নিলাম ৫৪ হাজার ৫০০ টাকায় আবদুল হামিদ ভাসানী, অবিনাশচন্দ্র শীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ধার্যকৃত ৬২ হাজার ৯ টাকার নিলাম ৬৪ হাজার টাকায় আবুল কালাম আজাদ, রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ধার্যকৃত একলাখ ৩৯ হাজার ২১৬ টাকার নিলাম একলাখ ৪৪ হাজার টাকায় এবি এম কামরুজ্জামান ক্রয় করে নেন।
নিলাম ক্রয়ের ওই দিনই আবদুল মজিদ ফকির ৬৬ হাজার ৫০০ টাকায়ে নেওয়া নিলাম স্বল্প বাহিরদিয়ার জিয়ার কাছে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকায়, আওরঙ্গজেব স্বর্ণ ৬৪ হাজার ৫০০ টাকায় নেওয়া নিলাম ফকিরহাটের আসাবুরের কাছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, তাহিদ হোসেন মোল্লা ৬৫ হাজার টাকায় নেওয়া নিলাম খুলনার এক ব্যবসায়ীর কাছে ২ লাখ টাকায়, মোর্শেদুল আলম বাবু ৬২ হাজার ৫০০ টাকায় নেওয়া নিলাম একলাখ ৭৫ হাজার টাকায়, সরদার মিজানুর রহমান ৬১ হাজার ৫০০ টাকায় নেওয়া নিলাম ফকিরহাটের আসাবুরের কাছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায়, ইউপি চেয়ারম্যান মোল্যা ওহিদুজ্জামান মিজান ৫৫ হাজার ৫০০ টাকায় নেওয়া নিলাম ফকিরহাটের আসাবুরের কাছে একলাখ ৭০ হাজার টাকায়, আবুল কালাম আজাদ ৬৪ হাজার টাকায় নেওয়া নিলাম ফকিরহাটের আসাবুরের কাছে একলাখ ৯০ হাজার টাকায়, এবি এম কামরুজ্জামান একলাখ ৪৪ হাজার টাকায় নেওয়া নিলাম ৩ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
এ ব্যাপারে রূপসা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রব বলেন, ‘উপজেলা নিলাম কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সেই মোতাবেক সর্বোচ্চ দর দাতাকে নিলাম দেওয়া হয়।’
রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া তাছনিম বলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে নিলাম মূল্য নির্ধারণ করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিলো। পরে ওপেনে নিলামের মাধ্যমে দরদাতাদের কাছে ভবনগুলো বিক্রি করা হয়। সিন্ডিকেটের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওপেনে নিলাম বিক্রি করা হয়েছে তবে, আপনারা যেমনটা শুনেছেন তেমনটি নয়।’