অসময়ে নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীব্র ¯্রােতে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। ১ সপ্তাহের ব্যবধানে অন্তত ৪০টি বশতবাড়িসহ ১০একর আবাদি কৃষি জমি নদের গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদসহ অর্ধশত বসতবাড়ী। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর কেউ কেউ অন্যের বাড়ীর আঙ্গিনায়, রাস্তার ধারে, আবার কেউ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে।তারা পায়নি সরকারি বা বে-সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা। চরম হতাশা দেখা দিয়েছে নদী তীরে বসবাসরত মানুষদের মাঝে।
সোমবারে সরেজমিনে কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ঢাকাইয়া পাড়া গ্রামঘুরে জানাগেছে, ইউনুছ আলী, জরিনা বেওয়া, ববিতা বেগম, কেশমত আলী, আলী হোসেন, ময়নাল হক, আনোয়ার হোসেন, খয়রুদ্দিন, আলেব খাঁ, আবুশামা মাষ্টার, ইসহাক আলী, জব্বার আলী, জামাল উদ্দিন, শুক্কুর আলী, রফিকুল ইসলাম, কামাল হোসেন, জনাব আলী, সাইফুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, খুশি আলম, গোলাম হোসেন, জামাল হোসেন, ছালাম, কালামসহ অন্তত ৪০টি পরিবারের বাড়িনদের গর্ভে বিলীন হয়েছে।
ভাঙ্গনের তীব্রতায় আরও অর্ধশত পরিবার হতাশায় দিন গুনছে। এ ব্যাপারে ভিটেমাটি হাড়ানো ভূক্তভোগিরা সরকারীভাবে সহযোগিতার আহবান জানিয়েছেন। নদী ভাঙ্গনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
নদী ভাঙ্গনের শিকার স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আবুশামা ,জামাল হোসেন, কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, জরিনা বেওয়া জানান, বাড়ির ভিটা ছাড়া তাদের আর কোন জায়গা-জমি নাই। তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই। সরকার যেন তাদের থাকার জায়গা করে দেন, সহযোগিতার হাত বাড়ান, তাদের মত আর কেউ যেন নদী ভাঙ্গনের কবলে নিঃস্ব না হয় এমনই দাবী তাদের।
ববিতা বেগম (৪৫) নামের এক গৃহীনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “বাপরে আংগোর সব কাইরা নিছে নদী। এতিম দুইডা বাচ্চা নিয়া কোন্ জাগায় থাকমু, থাকার জাগা নাই, খাবার নাই। এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র নাই। আংগোর ডাংধরা ইউনিয়নের কেউ আইসে না, আংগোর কেউ দেহে না। এমপি, মুনতুরি (মন্ত্রী), মেম্বার-চেয়ারম্যান কেউই আহে না, দেহেও না। আংগো বাঁচান।”
চরনেওয়াজী বালিকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমার বিদ্যালয়টি নদী ভাঙ্গনের হুমকির মুখে। নদী থেকে বিদ্যালয়ের দুরুত্ব মাত্র ১৫ মিটার। দ্রুত কর্যকরি ব্যবস্থা না নিলেদু’এক দিনের মধ্যে বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে চলে যাবে। নদী শাসনের কাজ চলছে, কিন্তু অব্যবস্থাপনার কারণে রাজিবপুর ও মোহনগঞ্জ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হলেও আমাদের ঢাকাইয়া পাড়ায় তা ফেলা হয় নাই। যার ফলে এ জায়গাতে তীব্র ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই সরকারের প্রতি দ্রুত ও কার্যকরী ব্যাবস্থার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।”
এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, “নদী ভাঙ্গনে আমার ইউনিনের দুই তৃতীয়াংশ বিলীন হয়েছে আগেই। এ বছর নদী শাসনের কাজ চলমান রয়েছে। ঢাকাইয়া পাড়া আরএফএল কোম্পানীর স্থান থেকে রাজিবপুর করাতি পাড়া পর্যন্ত কাজ হয় নাই। সঠিক নজরদারী না থাকায় ধীর গতিতে কাজ চলছে। তাই ওই এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ওই ঢাকাইয়া পাড়া জামালপুর এরিয়ার মধ্যে, আমার রাজিবপুর এরিয়ায় না। তারপরও নদী গর্ভে বিলীন হওয়া পরিবার গুলোকে সহযোগিতার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। দ্রুত তাদের সহযোগিতা করা হবে।”