জয়পুরহাটের কালাইয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধন করতে গিয়ে ধর্ষণের শীকার হয়েছেন একজন নারী। এ ঘটনায় বুধবার রাতে কালাই উপজেলা ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) কম্পিউটার অপারেটর মো.মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে কালাই থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর বাবা। মামলার পরপরই রাতেই অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ধর্ষককে গ্রেপ্তার করেছেন কালাই থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত মো.মামুনুর রশীদ উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের সায়ের আলীর ছেলে। বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
মামলার বিবরণ, পুলিশ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, অনুমান ছয় মাস আগে ২৭ বছর বয়সী ওই নারী তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য কালাই ইউডিসি'র কম্পিউটার অপারেটর মামুনুর রশীদের কাছে যান। তখন মামুন ওই নারীর মোবাইল নম্বর নেন। এরপর থেকে এনআইডি কার্ড দেয়ার জন্য নানা অজুহাতে মামুন ওই নারীকে তাঁর কার্যালয়ে ডাকেন। নানাভাবে হয়রানি করেন। কিন্তু কাজ করেন না। এভাবে একপর্যায়ে তাঁকে বিয়ের প্রলোভন দেন। আর কৌশলে নিজ কার্যালয়েই ওই নারীকে তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। তারপর গত ১০ অক্টোবর, সোমবার তাঁকে এনআইডি কার্ড দেওয়া হয়। সেটা নিয়ে মোবাইলের সিম কিনতে যান ওই নারী। তখন সেটা ভুয়া প্রমাণিত হয়। এরপর গত ১১ অক্টোবর, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই নারী কালাই 'ইউডিসি'তে গিয়ে মামুনকে ভুয়ো এনআইডি কার্ড দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করেন এবং প্রকৃত এনআইডি কার্ডের জন্য চাপ দেন। মামুন তখন পুনরায় দৈহিক সম্পর্কের শর্তে আসল কার্ড দিতে চান। কিন্তু ওই নারী তাতে অসম্মতি জানান। এতে মামুন ওই নারীকে তাঁর কার্যালয় থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। এতে মনের কষ্টে গত মঙ্গলবার ভুক্তভোগীর ওই নারী কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকার আন্ডারগ্রাউন্ডে অবস্থীত এক ফার্মেসি থেকে ব্যবস্তাপত্র ছাড়াই প্রায় ৮ টি ঘুমের বড়ি কিনেন। এবং কালাই 'ইউডিসি'তে গিয়ে ওই ঘুমের ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হোন। তখন তাঁকে উদ্ধার করে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে দেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় ভিক্টিমের বাবা বাদী হয়ে গত ১২ অক্টোবর, বুধবার রাতে কালাই থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর ওইদিন রাতেই অভিযান চালিয়ে মামুনকে গ্রেপ্তার করেন পুলিশ।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, আমি এনআইডি কার্ড সংশোধন করতে গেলে মামুনুর রশীদ তাঁর সাথে প্রতারণা করে ভুয়া এনআইডি দেয়েছেন। সে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর কার্যালয়ে আমাকে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেছেন। আমি আসল এনআইডি চাইলে, তা না দিয়ে উল্টো অপমান করে। এ অপমান সইতে না পেরে কালাই বাসস্ট্যান্ডের এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ডে অবস্থীত এক ওষধের দোকান থেকে অনুরোধ করে ওষুধ ক্রয় করে সেবন করেন। এতে আমি অনেক অসুস্থ হই। পরে স্থানীয় লোকজন আমাকে কালাই হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। আমি এর সুবিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মামুনুর রশীদ বলেন, ধর্ষণের বিষয়টি সত্য নয়। মেয়েটা আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। আমি এসব কাজের সাথে জড়িত নয়।
তবে ভুক্তভোগী ওই নারীর মা এবং বাবা অপরাধীর মামুনুর রশীদের কঠিন শাস্তির দাবি জানান।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ইউএনও জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, বিষয়টি আমি অবগত। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কালাই থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি এসএম মঈনুদ্দিন বলেন, ২৭ বছর বয়সী একজন মহিলা কালাই আইসিটি অফিসে প্রজেক্টে কর্মরত কম্পিউটার অপারেটরের কাছে এনআইডি কার্ড সংশোধন করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় তাঁর বাবা বাদী হয়ে বুধবার রাতে থানায় মামলা করেছেন। এরপর ওইদিন রাতেই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
ব্যবস্থাপত্র ছাড়া চেতনা নাশক বিক্রি বিষয়ে জয়পুরহাটের ওষুধ তত্তাবধায়ক মোকছেদুল আমিন বলেন, চেতনানাশক ওষুধ তো প্রেসক্রিপশন ছাড়া বেচার কোন সুযোগ নাই। তদন্ত করে প্রমাণ পেলে মোবাইল কোর্ট করা যায়কিনা অথবা দোকানটি সাময়িক বন্ধ করা যায়কিনা দেখছি।