মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মাল্টার চাষ সফল হয়েছে। বর্তমানে শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৩০০ টি প্রদর্শনী প্লটে মাল্টার চাষ হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয় কৃষি অফিস উদ্বুদ্ধকরনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরো ১৫ টি মাল্টা বাগান গড়ে তুলেছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জানান, ২০০৩ সালে বারি মাল্টা-১ নামে মাল্টার উন্নতজাত উদ্ভাবনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মাল্টার সফল চাষ হচ্ছে। তিনি জানান, এটি নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল জাত। ফল গোলাকার ও পাকা ফলের রঙ সবুজ। খুবই রসালো, খেতে মিষ্টি ও সুস্বাদু। হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ২০ টন।
মোনালিসা সুইটি আরো জানান, কৃষি অধিদপ্তরের 'সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে'র আওতায় ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো মাল্টা চাষ শুরু হয়। সে অনুযায়ী স্থানীয় কৃষি অফিস মাল্টা চাষীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ চারা, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, ভার্মি কম্পোস্ট, ছত্রাকনাশক, স্প্রে-মেশিন, সিকেচার (কাঁচি), কাটিং নাইফ বিনামুল্যে মাল্টা চাষীদের সরবরাহ করেন। গত ৫ বছরে এখন শ্রীমঙ্গলে প্রদর্শনী প্লটের সংখ্যা ৩০০ টি। ব্যাক্তিগত উদ্যোগে আরো ১৫ টি মাল্টা বাগান গড়ে উঠেছে। এখন এসব বাগানের গাছে গাছে প্রচুর মাল্টা শোভা পাঁচ্ছে। তিনি বলেন, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারন, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় ৫ শতক থেকে ১ একর পর্যন্ত আরো বাগান গড়ে তোলা হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল কৃষি অফিসের উপণ্ডসহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা রকেন্দ্র শর্মা জানান, সিলেট অঞ্চলের আবহাওয়া, জলবায়ু ও মাটি মাল্টা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ অঞ্চলের ছোট ছোট টিলা, পাহাড় ও পাহাড়ের ঢালুতে মাল্টা চমৎকার ফলন দিচ্ছে। এসব বিবেচনায় মাল্টা এ অঞ্চলের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় ফল। এটি একটি উচ্চমূল্যের ফসল। এতে মাল্টা চাষীরাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। মাল্টা চাষ সম্প্রসারণ করা হলে স্থানীয় ফলের চাহিদা পূরণ হবে। বিদেশী মাল্টা আমদানি কমে যাবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে
শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর এলাকার মাল্টাচাষী নুরুল ইসলাম তালুকদার ২০১৭ সালে তার আড়াই একর জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করেন। তার বাগানে মাল্টার ৭০০ গাছ রয়েছে। গতবছর (২০২১) তার বাগানে ফল আসতে শুরু করে। প্রথম বছর তিনি ৩৭ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেন। নুরুল ইসলাম জানান, তার বাগানের প্রতিটি গাছে মাল্টাফল এসেছে ৩৫-৪০ টা। কোন কোন গাছে মাল্টা আরও বেশি এসেছে। তিনি আরো জানান, চলতি বছর তিনি তার বাগান থেকে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবেন।
কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল মাল্টা একটি সুস্বাদু ফল। সাইট্রাস ফলের মধ্যে এটি অন্যতম জনপ্রিয় ফল। মাল্টা চাষিরা যদি নিয়মিত বাগান পরিচর্যা, আগাছা দমন, সেচ ও কীটনাশক স্প্রে করেন এবং যত্নবান হন তবে সামান্য খরচে প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদিত মাল্টা বিক্রি করে প্রচুর লাভবান হতে পারেন। তিনি বলেন, প্রতি বিঘাতে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করে ৩ বছর পর ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করতে পারেন। তিনি আরো বলেন, উপণ্ডসহকারি কৃষি কর্মকর্তারা প্রদর্শনী প্লটগুলো নিয়মিত পরিদর্শন ও দেখভাল করছেন এবং চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।