‘মিলন, অংশ্রগ্রহণ ও প্রেরণকর্মে মা মারিয়া’ এ মুল সুরের ওপর ভিত্তি করে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বারমারী সাধু লিও’র ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দু’দিন ব্যাপী ফাতেমা রাণীর ২৫ তম বার্ষিক তীর্থ। আগামী ২৭ ও ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য এই তীর্থকে ঘিরে বাংলাদেশের ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মাঝে বইছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। ইতোমধ্যেই এর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সর্বত্র বইছে উৎসবের আমেজ। শুধু শেরপুরের এই পাহাড়ি এলাকাতেই নয় বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের খ্রিস্টান উপজাতি পল্লীগুলোতে এখন উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত দুই বছর সংক্ষিপ্ত আকারে তীর্থ উৎসব পালিত হলেও এ বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে ফাতেমা রাণীর বার্ষিক তীর্থ পালিত হবে।
উৎসবের প্রথম দিন ২৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেল ৩ টায় পুর্ণমিলন/পাপ স্বীকার, বিকেল ৪ টায় পবিত্র খ্রীষ্টযাগ, রাত ৮ টায় আলোর মিছিল, পাপ স্বীকার, সাক্রামেন্তর আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান ও গীতি আলেখ্য অনুষ্ঠিত হবে। এদিন খ্রীষ্ট ভক্তরা নিজেদের পাপ মোচনে মোমবাতি জ¦ালিয়ে আলোর মিছিলে অংশগ্রহণ করে প্রায় ২ কি. মি. পাহাড়ী ক্রুশের পথ অতিক্রম শেষে মা-মারিয়ার প্রতিকৃতির সামনের বিশাল প্যান্ডেলে সমবেত হবেন। তারা ঈশ্বর জননী, খ্রীষ্টভক্তের রাণী, স্নেহময়ী মা ফাতেমা রাণীর কর কমলে ভক্তি শ্রদ্বা জানান ও তার অকৃপন সাহায্য প্রার্থনা করে থাকেন। ২৮ অক্টোবর শুক্রবার সকালে জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম ও মহা খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে ফাতেমা রাণীর বার্ষিক তীর্থ উৎসবের সমাপ্তি হবে।
তীর্থ উৎসবের সমন্বয়কারী ও সাধু লিও ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত রেভারেন্ট ফাদার তরুণ বনোয়ারী বলেন, এবারের তীর্থ উৎসবে দেশী বিদেশীসহ ৫০ হাজার তীর্থযাত্রীর আগমন ঘটতে পারে। তাদের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার, গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদল নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া তীর্থস্থান এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখতে সার্বিক কার্যক্রম সিসি ক্যামারার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করা হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত বারমারী সাধু লিও ধর্মপল্লীটিতে খ্রিস্টভক্তদের দাবীর প্রেক্ষিতে ৪২ একর জমির উপর পাহাড় ঘেরা মনোরম পরিবেশের এই স্থানটিকে নির্বাচন করা হয় তীর্থস্থান হিসেবে। ১৯৯৭ সালে পর্তুগালের ফাতেমা নগরীর আদলে ও অনুকরনে গড়ে তোলা সাধু লিও ধর্মপল্লীটিকে ফাতেমা রাণীর তীর্থস্থান হিসেবে ঘোষণা করেন ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের তৎকালীন প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গমেজ। এই তীর্থস্থানের প্রায় ২ কি. মি. পাহাড়ী টিলায় ক্রুশের পথ ও পাহাড়ের গুহায় স্থাপন করা হয়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ৪৮ ফুট উঁচু মা-মারিয়ার প্রতিকৃতি। ধর্মীয় চেতনায় খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের অংশ গ্রহণে প্রতিবছর তীর্থ উৎসব পালিত হওয়ায় বর্তমানে এটি মহাতীর্থ স্থানের রুপ পেতে যাচ্ছে। প্রতিবছরই এই তীর্থ উৎসবে দেশী বিদেশী তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা বেড়েই চলছে।