৫০/৬০টির অধিক বন্যহাতির একটি দল এক মাসের অধিক সময় ধরে অবস্থান করছে সীমান্তবর্তী শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের সন্নিকটে ১১১৮ নং পিলার সংলগ্ন গহিন জঙ্গল বানাই চেরেঙ্গিপাড়া নামক স্থান তালতলায়। প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যা নামার আগ মুহুর্তে পাহাড়ের এই গহিন জঙ্গল হতে ধান গাছ খাওয়ার নেশায় হানা দিচ্ছে সীমান্তের গ্রামগুলিতে। মঙ্গলবার ১৮ অক্টোবর দিবাগত রাত হতে আজ ১৯ অক্টোবর বুধবার ভোর পর্যন্ত তান্ডব চালিয়ে মায়াঘাষি, পানিহাতা, টিলাপাড়া, ফেকমারী গোপালপুর গ্রামের অন্তত ১০ জন কৃষকের ২০ একরের অধিক জমির জমির ধান নষ্ট করেছে। এছাড়াও বিনষ্ট করেছে সামাজিক বনায়নের বহু ছোট বড় রোপিত কাঠের চারা গাছ। গত এক মাস ধরে এই এলাকায় বন্য হাতির দল অবস্থান করায় এই এলাকার মানুষজনের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। জীবন সম্পদ রক্ষার আপ্রান চেষ্টা তারা করে যাচ্ছে। রাত জাগার কারণে আদিবাসি মানুষজন চোখ- মুখ ফোলে উঠেছে।
অন্যদিকে হাতি যাতে লোকালয়ে বা সমতল ভূমিতে প্রবেশ ও মানুষের জানমালের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য সরকার বৈদ্যুতিক সোলার ফেনসিং প্রকল্পে তারের লাইনে সংযোগ দিয়ে প্রায় ১০ কিঃ মিঃ এলাকা প্রতিরক্ষা বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা করলেও কিন্তু বন্যহাতির কাছে এই ব্যবস্থা কোন কাজেই আসছে না। এই বন্যহাতি মানছে না কোন বাধাঁ। এটির নিচ দিয়েই বন্যহাতির দল পাড় হয়ে ফসলের মাঠে অনায়েসে ঢুকে যাচ্ছে এবং ফসল খেয়ে পায়ে মাড়িয়ে সাবাড় করে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মায়ঘাষী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের মধ্যে রজব আলির (৫০) দেড় একর জমির ধান, রমজান আলীর ৫৬) দেড় একর, সাইদুল ইসলাম (৩৫) এক একর, সমেদ আলির (৭০) ৫০ শতাংশ, আঃ মজিদ (৭০) ৫০ শতাংশ, আঃ হামিদের (৫২) এর ৫০ শতাংশ ও তার দুই ছেলের আরো এক একর জমির ধান বিনষ্ট করেছে।
এছাড়াও গত এক সপ্তাহ পূর্বে এই বন্যহাতি আরো ১০জন কৃষকের জমির ধান ও গাছ বিনষ্ট করেছে এরা হলেন, আঃ কাদির (৬০) এর ১ একর জমির ধান, হুসেন আলীর (৬৫) দেড় একর, আশালতা নেংওয়ার (৪৫) ১ একর, আবু বক্কর সিদ্দিকের (২২) ১ একর, সাহাবুদ্দিনের (৪২) ১০ কাঠা, কাইুয়ুম (৩০) ১০ কাঠা, তাইজুলের (৪২) ১০ কাঠা, সাহেদ আলীর (৫৫) ১৫ কাঠা, রুবেল মিয়া (৩০) এর ১০ কাঠা জমির ধান বিনষ্ট করেছে। এরা আমনের কালিজিরা, পাইজাম, উনপঞ্চাশ জাতের ধান রোপন করেছিলেন বলে জানান।
পানিহাতা
মায়াঘাষি টিলাপাড়া গ্রামের মহিলা কৃষক প্রভা দিও (৪৫), কার্তিনা চিশিম (৬০) বলেন, আমরা আদিবাসি জনসম্প্রদায়ের লোকজন। এই পাহাড়েই আমাদের আদি বাসস্থান। আমাদের এই পাহাড়ে আমার অল্প কিছু জমি আছে। এখানে এই ধান রোপন করে যা হয় তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে। এখন এই হাতি আমাদের জমির ধান পায়ে মারিয়ে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। এখন আমার এই বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কিভাবে বেঁেচ থাকবো। গরু ছাগল ঘাষ খাওয়ানুর জন্য বনের ভিতর যেতে পারছি না। বন্য হাতির দল অবস্থান করায় এই এলাকার আমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। জীবন সম্পদ রক্ষার আপ্রান চেষ্টা আমরা করছি। রাত জাগার কারণে আমাদের আদিবাসি মানুষজন চোখ মুখ ফোলে উঠেছে। প্রতিদিন ঘুম জাগার কারণে দেখুন চোখ মুখের কি অবস্থা হয়েছে।
এলাকাবাসী আঃ কাদির (৫৫), হোসেন আলী (৫৮), আঃ হামিদ (৬২) বলেন, গত বোরো মৌসুমেও এই অবস্থা করেছে। এবারও একই অবস্থা। এদিকে বন্যহাতি প্রতিরোধ করতে যে সোলার ফেনসিং করেছে এটির নিচ দিয়ে হাতি চলে আসে। এই সোলার ফেনসিং লাইন আমাদের কোন কাজে লাগছে না। এটিকে সরিয়ে সীমান্তের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।
বন বিভাগ নালিতাবাড়ী মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ রফিক মিয়া বলেন, বিশেষ করে ধানের সময় এরা বেশি মাত্রায় পাহাড়ি এলাকায় তান্ডব চালায়। অনেক কৃষককের জমির ধান ক্ষেত বন্যহাতি নষ্ট করেছে। এদের ক্ষতিপূরন হিসাবে সরকার প্রনোদনা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্র্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভীন বলেন, আসলে বন্যহাতি কোন কিছুই মানছে না। কাটা জাতীয় গাছ রোপন, ক্যাকটাসসহ আরো কিছু গাছ রোপন করলে সেটি কাজে আসতে পারে। এছাড়াও কৃষকের যার যার ক্ষতি হয়েছে তারা ক্ষতিপুরনের আবেদন করলে ক্ষতি পূরন পাবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মায়াঘাসী গ্রামে গহীন বনে অবস্থান করছে বন্য হাতির দল।