মহাসড়কে নসিমন, করিমন, ভটভটি ও তিন চাকার যান বন্ধের দাবিতে খুলনার অভ্যন্তরীণ ১৮টি রুটে চলছে দু দিনের বাস-মিনিবাস ধর্মঘট। শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৬ টা থেকে এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে। হঠাৎ করে ধর্মঘটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে আগে থেকে জানতে না পারায় গন্তব্যে যেতে বিপদে পড়েছেন অনেক যাত্রী। পরিবহন মালিকরা জানিয়েছেন, সব পথে গাড়ি বন্ধের ঘোষণা থাকলেও ঢাকাণ্ডখুলনার রুটের বাস যশোর ও গোপালগঞ্জ পর্যন্ত যাবে। সাতক্ষীরামুখী যেসব বাস যশোর হয়ে চলে, সেগুলো চলবে। তবে যেগুলো খুলনা হয়ে চলে সেগুলো বন্ধ থাকবে। মূলত খুলনায় কোন গাড়ি প্রবেশ করতে ও খুলনা থেকে বিভিন্ন রুটে গাড়ি ছেড়ে যাবে না এ দুইদিন। যশোর থেকে আসা গৃহবধূ পপি বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি জানতে পারেন বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সংবাদ শুনে তিনি দুপুরের পরে খুলনার উদ্দেশে রওনা হন। পারিবারিক কাজ শেষে যশোরে যাওয়ার উদ্দেশে সোনাডঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে এসে দেখেন কোনো বাস চলছে না। জরুরী ভিত্তিতে তাকে বাড়িতে ফিরে যেতে হবে। ভেবে কোন উপায় না পেয়ে মাহিন্দ্রায় করে যশোরের পথে যাত্রা করবেন বলে চিন্তা করেন। কিন্তু সেখানে বাঁধ সাধে চালক, তিনি নওয়াপাড়ার বেশি যেতে চান না। ভাড়াও দ্বিগুণ দাবি করেছেন। পপি বেগম আরও বলেন, ঘরে তার ছোট বাচ্চা রয়েছে। এখন যেতে না পারলে তার বিপদ হয়ে যাবে। তাই যেভাবে হোক তাকে যেতে হবে। একই কথা জানালেন, নগরীর সাতরাস্তা মোড়ের বাসিন্দা নিরব ইসলাম। ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি রয়েছেন তার এক আত্মীয়। সেখানে অপারেশন হবে। জরুরী প্রয়োজনে যেতে হবে কিন্তু তিনি পারছেন না। অপর যাত্রী সাইফুল ইসলাম জরুরী কাজে ঢাকায় যাবেন। সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখেন কোন গাড়ি খুলনা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে না। শুনেছি মাইক্রো যাচ্ছে। এখন অপেক্ষায় আছি, যদিও সেখানে ভাড়া অনেক বেশি। খান আবদুল মোতালিব বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থেকে জমির কাগজ উঠাতে খুলনায় এসেছিলেন। কাজ বাকী আছে। শুনেছেন ধর্মঘট চলছে, তাই বাড়ি ফিরে যাবেন। সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখেন বাস নেই। এখানে থেকেও তার কোন লাভ নেই। বাসায় ফিরে যেতে তিনি বিকল্প পথ খুঁজছেন। সাধারণ যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেছেন, বিরোধী দলের কর্মসূচি বানচাল করতে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে জনগণকে জিম্মি করা হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলেছেন, পরিবহন ধর্মঘট ডেকে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও নৌপথে সকল বাহন বন্ধ করে দিলেও শনিবারের খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেবে। খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এস এম শফিকুল আলম মনা বলেন, শনিবার (২২ অক্টোবর) নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশ। এই সমাবেশে যাতে নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হতে না পারে এ কারণে পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো কারণ ছাড়াই নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের আটক করে সমাবেশ বানচাল করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, সব বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ সফল করা হবে। সমাবেশ হবে জনসমুদ্র। বিএনপির বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু বলেন, মাগুরাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে খুলনায় চলে এসেছেন। সমাবেশ সফল হবে। এদিকে বিএনপি খুলনা মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম জহির বলেন, কোন বাধাই আন্দোলন ঠেকাতে পারেনি। বাধা আসলে মানুষ বিকল্পে পথে সমাবেশে যোগ দিবে। আমরা আগেও পরিবহন শ্রমিকদের চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি। এখন শরীরিকভাবে তাদের বোঝাতে এসেছি। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া মেনে নেওয়া হবে। ধর্মঘটের ডাক দিয়ে তারা ভুল করছে। এর আগে বুধবার (১৯ অক্টোবর) খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির জরুরি সভায় পরিবহন ২দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমিতির কর্মকর্তা, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ও মালিকদের উপস্থিতিতে সভায় বলা হয়, হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সড়ক-মহাসড়কে নসিমন-করিমন, মহেন্দ্র, ইজিবাইক ও বিটিআরসির গাড়িগুলো চলাচল করছে। অবৈধ নছিমন-করিমন মাহেন্দ্র ইজিবাইক ও বিআরটিসির যত্রতত্র কাউন্টার বন্ধের দাবিতে ২১ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত দুই দিন মালিক সমিতির সকল গাড়ি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। এদিকে যাত্রীরা জনদূর্ভোগের পড়েছে রূপসা বাসটার্মিনালেও খুলনার ক্লিনিক থেকে রোগী নিয়ে পিরোজপুরের জিয়া নগর ইন্দুরকান্দি নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে রোগীর স্বজন পল্লী চিকিৎসক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, এই পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বিশেষ করে রোগী নিয়ে যাওয়া আসা খুব কষ্ট। গাড়ি না চলার কারণে ভাড়াও বেশি। কি কারণে পরিবহন ধর্মঘট হয়েছে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, শুনেছি বিএনপির সমাবেশের কারণে গাড়ি বন্দ করে দেওয়া হয়েছে। বাগেরহাট থেকে আসা খুলনা মেডিকেলে রোগী দেখতে আসা এক যাত্রী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আসার সময় গাড়ি পাইনি। ভোগান্তি হয়েছে, এমনকি বাধাও সৃষ্টি হয়। পরে ইজিবাইক করে চলে আসি। তিনি আরো বলেন, রোগীর দেখার পাশাপাশি খুলনায় বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে। সেই কারণে আসা। একইভাবে অনুভূতি প্রকাশ করেছেন, খুলনা থেকে রোগী দেখে আসা রোগীর আরো এক স্বজন মোংলায় নিজ বাড়িতে পরিবার নিয়ে ফেরার পথে মো. বাবুল শেখ নামের এক ব্যক্তি অনেক সময় দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়ি না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বলে এমন অনুভূতি প্রকাশ করেন তিনি। তবে বিএনপির সমাবেশ কেন্দ্র করে গাড়ি বন্দ করা হয়েছে বলে শুনেছেন এমন মন্তব্য তিনি করেছেন। পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়ে জানতে চাইলে রূপসা-বাগেরহাট বাস মিনিবাস ও মাইক্রো কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সড়ক-মহাসড়কে নসিমন-করিমন, মহেন্দ্র, ইজিবাইক গাড়িগুলো চলাচল করছে। এমনকি ভ্যানে ইঞ্জিন লাগিয়ে দ্রুত গতিতে হাইওয়ে সড়কে চলাচল করার কারণে যে-কোন মুহুর্তে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। যার কারণে মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন একত্র হয়ে দক্ষিনাঞ্চলে দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট দিয়েছেন। বিএনপির সমাবেশের কারণে পরিবহন ধর্মঘট দেওয়া হয়েছে কি-না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, কেউ যদি এমন কথা বলে থাকে তাহলে সেটা মিথ্যা ও বানোয়াট কথা বলেছে।