কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে বাড়ির সামনে থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন ওই আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে। রোববার রাত ১০ টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতা ইন্তাজ আলী শেখের (৪৮) মৃত্যু হয়। নিহত ইন্তাজ আলী শেখ ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ধরমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহাবুল আলম লালুর অনুসারী ছিলেন। এছাড়াও তিনি তামাক ও বিড়ি ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (২২ অক্টোবর) রাত ১০ টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা ইন্তাজ আলী শেখ তার ছেলে শাকিলকে (২৫) সাথে নিয়ে ব্যবসায়ীক কাজ শেষে ধরমপুর ইউনিয়নের মহিষাডোরা গ্রামে তাঁর নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। একপর্যায়ে বাড়ির গেটের সামনে পৌছালে একদল দুর্বৃত্ত ইন্তাজ ও তার ছেলে শাকিলকে ধরে হাতুড়ি, রড, লাঠিসোটা দিয়ে মারপিট করতে করতে রাস্তায় নিয়ে আসে এবং সেখানেও তাদেরকে বেধড়ক মারপিট করে। একসময় তাঁরা নিস্তেজ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মৃত ভেবে দৃর্বৃত্তরা তাদেরকে সেখানে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। আশংকাজনক অবস্থায় পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাত ১০ টার দিকে ইন্তাজ আলী শেখের মৃত্যু হয়।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা ইন্তাজ আলী শেখ নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শনিবার আওয়ামী লীগ নেতা ইন্তাজ আলী শেখ ও তার ছেলেকে মারপিটের ঘটনায় পরের দিন ১৭ জনকে আসামি করে ভেড়ামারা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। ইন্তাজ আলীর ভাই রবিউল ইসলাম বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এখন ইন্তাজ আলী শেখ নিহত হওয়ায় নতুন করে হত্যা মামলা দায়ের হবে। তবে পুলিশ পূর্বের মারপিট ও নিহতের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে ধরমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহাবুল আলম লালু জানান, বিভিন্ন দল থেকে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ইন্তাজ আলী শেখের মত ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগ নেতাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী এমনকি গোটা ইউনিয়নবাসী এই অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে আতঙ্কিত এবং চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমরা অবিলম্বে আওয়ামী লীগ নেতা ইন্তাজ আলী শেখের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। নিহত ইন্তাজ আলী শেখ ধরমপুর ইউনিয়নের মহিষাডোরা গ্রামের মৃত মোন্তাজ আলী শেখের ছেলে। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ের জনক।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইন্তাজ আলী শেখ কিছু দিন আগে অনুষ্ঠিত ধরমপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাবুল আলম লালুর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। লালু এই ইউনিয়নের পর পর দুই বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু ওই নির্বাচনে শাহাবুল আলম লালু মাত্র ৫শ ভোটের ব্যবধানে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল আজিজের ভাই শামসুল হকের কাছে পরাজিত হন। নির্বাচনে শাহাবুল আলম লালুর পক্ষে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা নিয়ে প্রতিপক্ষের বিরাগভাজন ছিলেন ইন্তাজ আলী শেখ। এছাড়াও বাড়ির সামনের একটি জায়গার দখল নিয়েও ইন্তাজ আলী শেখের সাথে কয়েক জনের বিরোধ চলে আসছিল। ইন্তাজ আলী শেখ দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টার পরও ওই জমির দখল পাচ্ছিলেন না। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত প্রায় ৮ মাস আগে ধরমপুর ইউনিয়নের মৎস ব্যবসায়ী দানেজ বিএনপি থেকে যুবলীগে যোগদানকারী জিয়া গ্যাংদের হামলায় নিহত হন। ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, কারা কী উদ্দেশ্য এই হামলা ও হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে মোটিভ এখনো স্পষ্ট নয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই হত্যাকান্ডের মোটিভ উদ্ধার এবং হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।