করোনা মহামারী কাটিয়ে বিশ্বশান্তি কামনায় নানা কর্মসূচি এবং ‘মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরন কর্মে মা মারিয়া’ এই মূলসুরের উপর ভিত্তি করে বৃহস্পতি- শুক্রবার (২৭ ও ২৮ অক্টোবর) শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে শেষ হয়েছে দেশের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ২৪তম বার্ষিক ফাতেমা রাণীর তীর্থ উৎসব। উৎসবটিতে বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ সারাদেশের খ্রিষ্টান ধর্মের নারী-পুরুষগণ অংশগ্রহণ করেন।
গত শুক্রবার দুপুর ১২টায় সমাপনী খ্রিষ্টযাগের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘোষণা করেন তীর্থ উৎসবের প্রধান বক্তা ঢাকা মহা খ্রিষ্ট ধর্ম প্রদেশের ভিকার জেনারেল ও বনানীর মেজর সেমিনারির প্রাক্তন রেক্টর গ্যাব্রিয়ল কোরাইয়া। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালে ময়মনসিংহ খ্রিষ্টধর্ম প্রদেশের ভিকার জেনারেল রেভারেন্ড ফাদার শিমন হাচ্চা তীর্থ উৎসবের উদ্বোধনী খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করেন।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় মোমবাতি জ¦ালিয়ে তীর্থ যাত্রীরা আলোক শোভা যাত্রায় অংশ নেন। নিজেদের পাপ মোচন করতে মোমবাতি জ¦ালিয়ে হাজার হাজার খ্রিষ্টভক্ত প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড়ি ক্রুশের পথ অতিক্রম করেন। সেখানে ৪৮ ফুট উঁচু মা মারিয়ার মূর্তির সামনে বিশাল প্যান্ডেলে সমবেত হয়ে নৃত্যগীত, নিরাময়, গীতি আলেখ্য ও নিশিজাগরণ পালন করেন। শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত হয় জীবন্ত ক্রুশের পথ। এতে যিশু খ্রিষ্ট কে ক্রুশবিদ্ধ করে কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল তা দেখানো হয়। এদিকে ফাতেমা রানীর বার্ষিক তীর্থ উৎসব উপলক্ষে গারো পাহাড় সাজে বর্ণিল রুপে। তীর্থস্থানের পাশে মাঠে বসে বাহারি জিনিপত্রের দোকান।
খ্রিষ্ট ভক্তদের তীর্থ উৎসবে শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার, পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজা নাজনীন, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক, তীর্থ উৎসবের সমন্বয়কারী রেভান্টে ফাদার তরুন বনোয়ারী, বারমারী ধর্মপলল্লীর সহ-সভাপতি মি. লুইস নেংমিনজা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, এখন থেকে ১০৫ বছর আগে ১৯১৭ সালে পর্তুগালের ফাতেমা নগরে মা মারিয়া তিনজন নর-নারীর কাছে দেখা দিয়েছিলেন। মা মারিয়ার দেখা পেয়ে তারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন। পরে ওই বিশ্বাসীর সংখ্যা বেড়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। সেই বিশ্বাস থেকেই বাংলাদেশি খ্রিষ্ট ভক্তরা নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বারমারী সাধু লিওর খ্রিষ্ট ধর্মপল্লীতে পর্তুগালের ফাতেমা নগরের আদলে ১৯৯৮ সালে ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান স্থাপন করেন। স্থাপনকাল থেকেই ভিন্ন ভিন্ন মূলসুরে প্রতিবছর বার্ষিক তীর্থ উৎসব পালিত হয়।