নাটোরের লালপুর উপজেলার বুধপাড়ার ঐতিহ্যবাহী ৫৩৩তম কালীপূজা ও মেলার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। দেশ-বিদেশের হাজারো ভক্ত ও দর্শকের পদচারণায় ৭ দিনব্যাপী মিলন মেলা প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৩০ অক্টোবর রোববার সন্ধ্যা রাতে সমাপ্ত হয়েছে।
পূজা কমিটি সূত্রে জানাযায়, গত সোমবার (২৪ অক্টোবর) মধ্য রাত থেকে শুরু হয়েছে
ঐতিহ্যবাহী ৫৩৩তম কালীপূজা ও মেলার আনুষ্ঠানিকতা। হাজারো দর্শনার্থী ও ভক্তবৃন্দের পদচারণায় মন্দির এলাকায় উৎসব মুখর পরিবেশ মেলা চলে। মেলায়
শতাধিক স্টল বরাদ্দ ছিল। শিশুদের জন্য ছিল নাগর দোলার ব্যবস্থা। লোহার তৈরী দা, কুড়াল, বটি, কাচি, হাসুয়া, কোদালসহ গৃহস্থালী কাজের রকমারি জিনিসপত্রের দোকান। বাঁশ ও কাঠের তৈরী নানা আসবাপত্র, কুটির শিল্পের নানা পন্য এবং মিষ্টান্নের সঙ্গে কসমেটিকস সামগ্রীতে সেজেছিল মেলার স্টল গুলো। বাহারি পোশাক, কম্বল, শিশুদের বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী, খাবার, বইয়ের দোকান, ফার্নিচার সামগ্রীর দোকান। সেই সাথে চলেছে মুখোরোচক গরম গরম পাপড় ভাঁজা।
বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বাড়ি থেকে বিভিন্ন ফল ও মানতের পাঁঠা নিয়ে পূজা মন্ডপে আসেন। তাদের স্বাগত জানাতে সামনে-পেছনে ঢোল বাদকরা বাজনা বাজায়। ভক্তরা পূজা মন্ডপে এসে তাঁদের নাম ও ফি প্রদান শেষে সঙ্গে আনা বিভিন্ন সামগ্রী কালিকে প্রণাম শেষে অর্পণ করেন।
পূজা কমিটির সভাপতি মুকুল কুমার সাহা বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের পূঁজারী ছাড়াও দেশ বিদেশী ভক্তবৃন্দ ও সাধু-সন্যাসীদের সমাগম ঘটে দীর্ঘদিন থেকে। সকলের পদচারনায় অভূতপূর্ব মিলনমেলায় পরিণত হয় এই মেলা।
কালীপূজা ও মেলা সোমবার
(২৪ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। দেশ-বিদেশের হাজারো ভক্ত ও দর্শকের পদচারণায় ৭ দিনব্যাপী মিলন মেলা প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৩০ অক্টোবর রোববার সোয়া ৭টায় শেষ হলো।
মন্দির কমিটির উপদেষ্টা শ্রী গণেশ চন্দ দাস বলেন এ পূজার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে পাঠাবলি। আর পাঠাবলি দেখতে সেখানে ভিড় পড়ে যায়।
পুজা কমিটি সূত্রে জানা যায়, ৫৩৩ বছর আগে নবাবী আমলে বর্গীয় হাঙ্গামায় বর্গীদের অত্যাচারে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের খাগড়া থেকে ৬০ঘর কংস বণিক লালপুরের বুধপাড়ায় এসে বসতি স্থাপন করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের এই কাঁসা শিল্পীরা কালীপূজা অর্চনার জন্য খড়ের ঘরে একটি মন্দির নির্মান করেন। বাংলা ১৩৩২ সালে জনৈক লাল কেনেডিয়ার স্ত্রী জানকী বাঈয়ের আর্থিক অনুদানে পাকা মন্দির নির্মিত হয়। প্রতি বছর কার্তিক মাসে এখানে কালীপূজা ও মেলা হয়। মন্দিরে পূজা চলাকালীন প্রতিদিন প্রায় শতাধিক পাঁঠা বলি হয়ে থাকে।
লালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাঃ মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবছরই লালপুরে কালি পূজা উদযাপন হয়ে আসছে। কালিপূজার আনুষ্ঠানিকতা শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। ৭দিন ব্যাপী মেলায় যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ প্রশাসন প্রস্তুত ছিল। রোববার সন্ধ্যারাত (সোয়া ৭টায়) শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত হয়েছে।