যশোর শ্ক্ষিা বোর্ড’র পরীক্ষণ, নিরীক্ষণ, মডারেশন, প্রশ্ন প্রনায়ন সহ জনগুরুত্বপূর্ন যে কোন কাজে অংশ না নেওয়ার নির্দেশনা কে পাশ কাটিয়ে এইচ এস সি পরীক্ষার বাংলা ১ম পত্রের মডারেশনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ ডিগ্রী কলেজের বাংলা বিভাগের বির্তকিত শিক্ষক রেজাউল করিম। বর্তমান সময়ে আলোচিত ওই শিক্ষককে কয়েক মাস আগে নারী কেলেংকারীর অভিযোগে সাময়িক বহিস্কারাদেশ দিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ স্বীকার করে ওই সময় মুচলেকাও দিয়েছিলেন তিনি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্রে ধর্মীয় উস্কানির অভিযোগ আনা হয়েছে। এই প্রশ্নে বলা হয়, নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আবদুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে। আবদুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে। এই প্রশ্নটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এরই প্রেক্ষিতে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, বাংলা প্রথম পত্রের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক প্রশ্নপত্রটি যশোর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রণীত। প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উস্কানির সঙ্গে জড়িত প্রশ্নকর্তা ঝিনাইদহের মহেশপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল। অপরদিকে প্রশ্নপত্র পরিশোধনের (মডারেশন) দায়িত্বে ছিলেন, নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দীন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান, নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ এবং কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ইতোমধ্যে কমিটিও গঠন করেছে শিক্ষা বোর্ড।
এ ঘটনার পর থেকেই তোলপাড় শুরু হয় কুষ্টিয়া সহ সারাদেশে। শাস্তির দাবী উঠে ভেড়ামারাতেও। কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, চরম ইসলাম বিদ্বেষী রেজাউল করিম একজন নাস্তিক। ইসলাম এবং মুসলমানদের কার্যকলাপ দেখলেও তিনি বিরুপ মন্তব্য করে থাকেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা নামাজ কলাম পড়েন তাদের কে তিনি জঙ্গী বল্ইে আখ্যা দেন।
সূত্র জানায়, আদর্শ কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিম। তার এমপিও ইনডেক্স নং কে৪২৫৮৯১। চলতি বছরের ৫ এপ্রিল আদর্শ কলেজের কারিগরি শাখার মেধাবী শিক্ষার্থ সুরাইয়া খাতুন রোল নং ৬ রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীর অভিযোগ আনেন। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, তাকে শ্লীতাহানীর লক্ষ্যে আপত্তিকর প্রস্তাব দেয় এবং প্রলোভন দেখান। সুযোগ সৃষ্টি করে ওই শিক্ষার্থীর মিরপুরস্থ বাড়িতেও চলে যান কলেজ শিক্ষক রেজাউল করিম। সেখানেও শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেন। পরে পরিস্থিতি বেগতিক আঁচ করে তিনি পালিয়ে আসেন। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। লম্পট ওই শিক্ষকের শাস্তি এবং বহিস্কার দাবী করে শিক্ষার্থীরা কলেজে মিটিং মিছিল সমাবেশ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে গেলে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ বির্তকিত শিক্ষক রেজাউল করিম কে সাময়িক বহিস্কার করেন। যার স্বারক নং ভেআক/ভেড়া/কুষ-২৪/২০২২ তারিখ ঃ ০৫/০৪/২০২২। স্থায়ী ভাবে বহিস্কারের লক্ষ্যে ৭ এপ্রিল ভেআক/ভেড়া/কুষ-২৫/২০২২ নং স্বারকে ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ওই শিক্ষার্থীর কাছে মিমাংশা করে, কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে দোষ স্বীকার করে মুচলেকা দেন।
ভেড়ামারা আদর্শ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, নানা ভাবেই বির্তকিত শিক্ষক রেজাউল করিম। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তিনি জানান, শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানীর অভিযোগ প্রমানিত হওয়ার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ ২৭ জুন ’ ২২ তারিখের ভেআক/ভেড়া/কুষ-৪৮/২০২২ নং স্বারকে বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের শর্ত সাপেক্ষে চিঠি দেয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জনগুরুত্বপূর্ন কাজ যেমন, যশোর শ্ক্ষিা বোর্ড, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি শিক্ষা বোড’র পরীক্ষণ, নিরীক্ষণ, প্রশ্ন প্রনায়ন মডারেশন ও কলেজের ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত থাকার শর্ত দেওয়া হয়। এবং বলা হয়, কোন শৃঙখলা বিরোধী অযাচিত কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকবেন। অন্যথায় চাকুরীবিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ বিষয়ে রেজাউল করিম’র সাথে তার মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে মোবাইল টি বন্ধ পাওয়া গেছে।