হেঁটে যাচ্ছে যাত্রীরা। দেখে মনে হবে দল বেঁধে কোথাও ছুটে চলেছে। কিন্তুু তারা এক গাড়ি থেকে নেমে আরেক গাড়িতে উঠতে যাচ্ছে তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। নওগাঁ জেলার পূর্ব এবং বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে পশ্চিম ঢাকা বাইপাস রোড নামক স্থানে গিয়ে দেখা যায় এই দৃশ্য। সেখানে আছে একটি ছোট ব্রীজ। ব্রীজটি যেন সীমানা নির্ধারণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ব্রীজের এক পাশে সারি করে দাঁড়িয়ে আছে নওগাঁ যাতায়াতের সিএনজি-অটো, আরেক পাশে দাঁড়িয়ে আছে সান্তাহার যাতায়াতের সিএনজি-অটো। নওগাঁর এবং সান্তাহারের সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটো শ্রমিকের দ্বন্দের জেরে এভাবেই সীমানা নির্ধারণ করে চলছে যানবাহন। আর তাদের দ্বন্দের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ যাত্রীরা।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, মূলত নওগাঁ জেলার সিএনজি তিলকপুর রোডে চলাচল নিয়ে এই সমস্যার সৃষ্টি। নওগাঁর কিছু সিএনজি সান্তাহার হয়ে তিলকপুর রোডে যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে চায়। আর সান্তাহারে শ্রমিকেরা সান্তাহার হয়ে তিলকপুর রোডে যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে দিবে না। এই চলতে চাওয়া এবং চলতে দিবে না নিয়ে উভয় পক্ষের শ্রমিকের মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরে দ্বন্দ চলছিল। এরই জের ধরে গত সপ্তাহে উভয় পক্ষের চালকের মধ্যে মারামারি হয়। পরবর্তীতে নওগাঁর সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটো শ্রমিক এবং সান্তাহারে সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটো শ্রমিকের মধ্যে আবারও মারামারি হয়। এবং উভয় পক্ষের কিছু সিএনজি-অটো ভাংচুর করা হয়। এরই জের ধরে গত ৬-৭ দিন থেকে সীমানা নির্ধারণ করে চলছে যানবাহন। আর ভোগান্তি পোহাচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা। এদিকে সাধারণ যাত্রী ও সচেতনরা এই ভোগান্তি থেকে দ্রুত সমাধান চায়।
বগুড়া জেলা সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটো মালিক সমিতির সভাপতি নুর ইসলাম বলেন, আমরা সমাধানের জন্য সব সময় প্রস্তুত আছি। তাই নওগাঁ জেলার সিএনজি-অটো মালিক সমিতির যারা নেতৃত্বে আছেন তাদের সাথে একাধিকবার কথা বলেছি। তাদের সাথে বসার একটা কথাও ছিল। কিন্তু তারা কোন কারণবশত আসতে পারেনি। তাই আর সমাধানও হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমরা নওগাঁর সিএনজি গুলোকে যাত্রী নিয়ে সান্তাহার হয়ে তিলকপুর সব সময় যেতে বলেছি। এবং তিলকপুর থেকে যাত্রী নিয়ে ফতেপুর রোড হয়ে তাদের কে যাওয়ার জন্য বলেছি। যেহেতু তারা আগে সেই রাস্তাই ব্যবহার করতো। কিন্তু তারা সেটা মানতে নারাজ। তিনি একরকম আক্ষেপ করেই বলেন, কে এর উদ্যোগ নিবে? কাউকে না কাউকে কিছুটা ছাড় দিতেই হবে। তবে সমঝোতা করে চলাই উত্তম বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এবং উভয় পক্ষ বসলে খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে বলেও জানান তিনি।
নওগাঁ জেলা সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটো মালিক সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, আমাদের নওগাঁ জেলার প্রায় ২২ কিলোমিটার রাস্তা তারা ব্যবহার করছে। আর আমরা তাদের হবির মোড় হয়ে ছাতিয়ানগ্রাম দিয়ে মাত্র এই সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা ব্যবহার করে তিলকপুর চলাচল করতে চাই। যেহেতু আমাদের ফতেপুরের রাস্তাটি বর্তমানে চরম খারাপ। তাও আবার আমরা তাদেরকে ইনসিওর করেছি যে আমাদের সিএনজি সান্তাহারে কোন যাত্রী তুলবে না। কিন্তু তারা সেটাও মানতে নারাজ। এখানে সকলের মানবিক দিক বিবেচনা করা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে আমি আশা করছি আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে বসে এই সমস্যার সমাধান করা হবে।
এ বিষয়ে সান্তাহার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবদুল কাদের জিলানী বলেন, আমরা উভয় পক্ষের শ্রমিক ও মালিক সমিতির নেতাদের সাথে কথা বলেছি। এ ছাড়া নওগাঁ সদর থানার ওসির সাথেও কথা হয়েছে। আগামী সোমবার বা মঙ্গলবার দিন বসে এই সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
নওগাঁ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ফায়সাল বিন আহসান বলেন, গতকাল তাদের বসে বিষয়টি সমাধান করার কথা ছিল। যদি সমাধান না হয়ে থাকে তাহলে আমি উভয় পক্ষের শ্রমিক ও মালিক সমিতির নেতাদের সাথে কথা বলবো। এবং বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করবো।