গত ৬নভেম্বর এইচএসসি পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সৃজনশীল প্রশ্নের অংশ হিসেবে এমন বিষয় বেছে নেয়া হয়েছে যা খুবই সংবেদনশীল। সাম্প্রদায়িক মনোভঙ্গি উসকে দিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। ঢাকা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষার এ প্রশ্ন পত্র প্রনয়ণ ও পরিশোধন করেন যশোর শিক্ষাবোর্ডের বিভিন্ন কলেজ শিক্ষক। সংগত কারণে যশোর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক এম রাব্বানীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি এক সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে। তদন্তেরভিত্তিতে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
নিয়ম অনুযায়ী প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ও পরিশোধনকরীদের সাম্প্রদায়িক ও বিদ্বেষপূর্ণ কোনো বক্তব্য যেন প্রশ্ন পত্রে না থাকে সে জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সময়ই লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তাদের নিজ নিজ কাজ সঠিক ভাবে পালন করেন নি। কারণ প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ও পরিশোধনকারী ছাড়া পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র দেখার সুযোগ কারো নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেছিলেন ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল। আর চার পরিশোধনকারী হলেন নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ ও কুষ্টিয়া ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিম।
প্রশ্নপত্রে নেপাল ও গোপালের যে কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে তা বাস্তবতা বর্জিত। এ প্রশ্নপত্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অপপ্রয়াস। অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেতভাবে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত একটি দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সমস্যা যে নেই তানা নয়, তবে প্রশ্নপত্রে যে কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে তারা বাস্তব কোনো ঘটনা নেই। তাছাড়া চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সাম্প্রদায়িক কোনো ঘটনা ঘটে নি বা ঘটার সম্ভাবনাও নেই। ফলে তরুন শিক্ষকদের মাঝে এ প্রশ্ন নেতিবাচক ধারনা সৃষ্টি করতে পারে। প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ও পরিশোধনকারীরা নীতিমালা লংঘন করলে সে প্রশ্নপত্র বাতিল হবার কথা। সেক্ষেত্রে বোর্ড কতৃপক্ষ কি করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সেই বিতর্কিত প্রশ্নপত্র দিয়ে কিভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলো তাও তদন্ত করে দেখা উচিৎ।
তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে তার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার জানান, সরকারি শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলার ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্তা নিতে পারে মন্ত্রণালয়। আর এমপিওভুক্ত শিক্ষাকদের ক্ষেত্রে এমপিও বাতিল বা স্থগিত হতে পারে। এ শাস্তিকে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন গুরু পাপে লঘূদন্ড। এমন অদক্ষ অসচেতন ব্যক্তিদের বোর্ড কতৃপক্ষ কেন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও পরিশোধনকারীর দায়িত্ব দিল? এদের কাজের তদারকির জন্য বোর্ড কতৃপক্ষের যে ব্যাক্তিরা যুক্ত ছিলেন তারা কি করেছেন? কাজেই তদন্ত সব মিলিয়ে করতে হবে এবং দোষি ব্যাক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।