দেশে বেশ কিছুদিন ধরে গ্যাস সংকট চলছে এবং সহজে এর থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। এসবের মধ্যে সিলেটের বিয়ানীবাজারে একটি পরিত্যক্ত কূপে নতুন করে গ্যাস পাওয়া গেছে। দেশের প্রেক্ষাপটে তো বটেই, বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকটের এ সময়ে এটা আশাব্যঞ্জক ঘটনা অবশ্যই। জানা গেছে, বিয়ানীবাজার গ্যাসফিল্ডের ১ নম্বর কূপ থেকে ১৯৯৯ সালে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। ২০১৪ সালে কূপটি বন্ধ হয়ে যায়। কিছু রক্ষণাবেক্ষণের পর ২০১৭ সালে আরও সাত মাস গ্যাস উত্তোলন করা হয়। এরপর কূপটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০২০ সালে এ কূপসহ তিনটি কূপে ওয়ার্ক ওভার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। গত ১০ সেপ্টেম্বর ১ নম্বর কূপটির ওয়ার্ক ওভার কাজ শুরু হয়। অবশেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে এ কূপ থেকে প্রতিদিন ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। এ অভিজ্ঞতার আলোকে পরিত্যক্ত বা পুরোনো অন্যান্য কূপেও গ্যাসের জোর অনুসন্ধান চালানো উচিত বলে মনে করি আমরা। উল্লেখ্য, নতুন কূপ খনন করে গ্যাস উত্তোলনের তুলনায় পুরোনো কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলনে সময় ও ব্যয় উভয়ই কম লাগে। বর্তমানে গ্যাস সংকটের কারণে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে প্রায় সর্বত্র। দেশে উৎপাদিত গ্যাসের উল্লেখযোগ্য অংশ সরবরাহ করা হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এ ছাড়া সার কারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, গৃহস্থালি (আবাসিক), সিএনজি এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও গ্যাস ব্যবহার করা হয়। এ কারণে গ্যাস খাতকে দেওয়া উচিত সর্বোচ্চ গুরুত্ব। দেশে দীর্ঘদিন ধরে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও আবিষ্কারে ত্রিমাত্রিক সার্ভে সম্পন্ন করে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কূপ খনন করা হলে সুফল পাওয়া যেতে পারে। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে এ মুহূর্তে নতুন গ্যাসক্ষেত্রের অনুসন্ধান বা নতুন কূপ খননের ব্যয়বহুল কার্যক্রমের চেয়ে পুরোনো কূপে বেশি গুরুত্ব দেওয়াই সমীচীন। জানা গেছে, দেশীয় কোম্পানির আওতায় থাকা গ্যাসক্ষেত্রগুলোর বেশিরভাগই ষাটের দশকের। পুরোনো এ গ্যাসক্ষেত্রগুলোয় নতুন করে কম্প্রেসার না বসানোর ফলে উৎপাদন কমে গেছে। তবে বিদেশি কোম্পানিগুলোর আওতায় থাকা গ্যাসক্ষেত্রগুলোয় সময়মতো কম্প্রেসার বসানোর ফলে তারা উৎপাদন যথাযথ মাত্রায় ধরে রাখতে পেরেছে। তাই দেশীয় কোম্পানিগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। সেই সঙ্গে গ্যাসের অপচয় রোধেও নিতে হবে ব্যবস্থা। আমরা আশা করি, নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের পাশাপাশি পুরনোগুলোতেও যদি গুরুত্ব দেখা হয় তাহলে অদূরভবিষ্যতে সংকট কেটে যাবে।