হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে শৈলকুপায় ২২ টি অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ। ্এদিকে দেশের সব অবৈধ ইটভাটা ও ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার সাত দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ মহামান্য হাইকোর্ট দিলেও তা মানছে না ভাঁটা মালিকেরা।বর্তমানে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা জুড়ে ২২টি ইট ভাঁটা রয়েছে এর মধ্যে পৌরসভার মধ্যে অবস্থিত অবৈধ ইটভাটাগুলো লাগামহীনভাবে চলছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় পৌরসভাসহ উপজেলার মধ্যে কিভাবে এসব ইট ভাঁটা গুলো অবাধে চলছে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব অবৈধ ইট ভাটার তালিকায় শৈলকুপা পৌরসভার কাজীপাড়ায় আশা ইট ভাঁটা সহ আরো ৬টি ইট ভাঁটা রয়েছে এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন ইট ভাটা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই ইট ভাটাগুলো অবাধে চলছে। তবে ইট ভাঁটা মালিকরা বলছে আমরা নিয়মের মধ্যে আছি।
ইট প্রস্তুত ও ভাঁটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুসারে লাইসেন্স ছাড়া কোনো ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা করা যায় না এবং জ্বালানি হিসেবে ইটভাটায় কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও শীত মৌসুমকে সামনে রেখে উপজেলার অবৈধ ইট ভাটাগুলো কার্যক্রম শুরু করেছে। বিভিন্ন সময়ে কিছু কিছু ইট ভাটায় অভিযান পরিচালনা হলেও বেশীরভাগ ইট ভাঁটা রয়ে যায় ধরা ছোয়ার বাইরে।
উপজেলার বিভিন্ন ইট ভাঁটা ঘুরে দেখা যায়,পাহাড়ের মত উঁচু করে হাজার হাজার মন কাঠ সাজিয়ে রেখে তা পোড়ানো হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিদিন বাজারের মধ্য দিয়ে মাটি টানা ট্রাক্টর চলায় ধুলাবালিতে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।মাটি, খড়ি, ইট বোঝাই করে ট্রাকের পর ট্রাক যাতায়াত করে ইটভাটায়। ধুলো আর ধোঁয়া ও মাটি-ইট আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টরের শব্দদুষণ যেমন বৃদ্ধি পাঁচ্ছে তেমনি ধুলাবালিতে বায়ু দূষণ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ফলে শিশু সহ জনসাধারন শ্বাস তন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
গত বছর উপজেলার পৌর এলাকার আশা ইটভাটার ট্রাক্টরের ধাক্কায় সেনাবাহিনীর এক সদস্যের স্ত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয় অথচ গত বছরেও পৌর এলাকার ৬টি ভাটার মধ্যে ৫ টি ভাঁটা গুড়িয়ে দিলেও অজ্ঞাত কারণে পৌর এলাকার অবৈধ আশা ইট ভাটায় কেন অভিযান পরিচালনা হয়নি তা নিয়ে ছিল সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন। পৌর এলাকাতে এখনো রয়েছে ৬টি অবৈধ ইটভাটা, যার বৈধতা নেই। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমিতে রয়েছে ইট ভাটা। মানা হয়নি সরকারী নীতিমালা। সরকারী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে হাজার হাজার মন কাঠ দিয়ে ইট পুড়িয়ে চলেছে। একেবারেই জনাকীর্ণ আবাসিক এলাকায় আশা নামে ইট ভাটাটির অবস্থান থাকলেও এর বিরুেেদ্ধ কোন কালেও কোন আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। পৌরসভার মধ্যে অবস্থিত আশা ইটভাটাসহ ৬টি ইটভাটা অবিলম্বে গুড়িয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ সচেতন মানুষেরা।
ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী, বিশেষ কোন স্থাপনা, রেলপথ, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং লোকালয় থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। তবে কোন নিয়ম মানতে নারাজ ইটভাটা মালিকরা। স্কুল,মাদ্রাসার পাশে ও লোকালয়ে কিভাবে ছলছে এসব ইট ভাঁটা তার কোন উত্তর খুঁজে পাঁচ্ছে না সাধারণ মানুষ। পৌর এলাকার মালিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বলেন,পৌরসভার মধ্যে অবৈধভাবে ইট ভাটাগুলো চলছে। এরমধ্যে আশা ইটভাটার অবস্থান মালিপাড়া মাদ্রাসার সন্নিকটে হওয়ায় খুব সমস্যার মধ্যে অছে এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও ভাটাটির অবস্থান জনাকীর্ন এলাকায় হওয়ায় নানা সমস্যার মধ্যে আছে সাধারণ মানুষ। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ না মানা খুবই দুঃখজনক।এ ব্যাপারে পৌর মেয়র কাজী আশরাফুল আজম বলেন,পৌরসভার মধ্যে এভাবে ইট ভাঁটা চালানোর আইনগত ভিত্তি নেই। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ না মেনে কিভাবে চলছে আমি বলতে পারবো না।এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্রীরুপ মজুমদার বলেন, পৌরসভার মধ্যে এভাবে ইট ভাঁটা পরিচালনা করার কোন বৈধ্যতা নেই।ইতিমধ্যে অবৈধ ইট ভাটার বিষয়ে ইট ভাটার মালিকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।নিয়মের মধ্যে না থাকলে আমরা অবৈধ ইট ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অচিরেই আইনগত ব্যবস্থা নিব। তবে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কোন চিঠি আমরা অফিসিয়ালী পাইনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) বনি আমিন বলেন, অচিরেই অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। নিয়মের বাইরে কোন ইট ভাঁটা চলতে দেওয়া যাবে না।