সুন্দরবনে গরানের পারমিট বন্ধ থাকায় হাজার হাজার বাওয়ালী পড়েছে বিপাকে। অপরদিকে প্রতি বছর গরান কাঠ না কাটায় সুন্দরবনের গরান সমৃদ্ধ এলাকায় গাছের প্রজনন বাধা গ্রস্ত হচ্ছে। অবিলম্বে গরান কাটার পারমিট চালু করার জোর দাবি জানিয়েছে সুন্দরবন সংলগ্ন বাওয়ালীরা।
বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে,২০০৭ সালের সামুদ্রিক ঘুর্নিঝড় সিডর সুন্দরবনে ওপর দিয়ে আঘাত হানার পর ঐ বছর সরকার গরান ও গোলপাতা কর্তন নিষিদ্ধ করে দেয়। দু বছর পর গোলপাতার পারমিট চালু করা হলেও গরানের পারমিট আর চালু করেনি বন বিভাগ। সেই থেকে হাজার হাজার বাওয়ালী চরম বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এখনও অনেক বাওয়ালী প্রতি বছর গরান কাটার অপেক্ষায় নৌকা সংস্কার করে আশায় বুক বেধে বসে থাকে। ইতোমধ্যে অনেক বাওয়ালী পেশা পরিবর্তন করে দিন মুজুরের কাজ বেছে নিয়েছে। অনেকের নৌকা অকেজো হয়ে পড়ে আছে। তবে পারমিট বন্ধ করা হলেও এর সাথে সংশ্লিষ্টদের কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করায় চরম ক্ষোভের সঞ্চয় ঘটে বাওয়ালীদের মাঝে।
বাওয়ালীদের সুত্রে জানা গেছে, সত্তর দশকে সুন্দরবনে গরান, গোলপাতা, হেতাল, গেওয়া, সুন্দরী কাঠ কাটার পারমিট দিতো বন বিভাগ। নব্বই দশকের পর এসকল পারমিট কমিয়ে শুধুমাত্র সুন্দরী, গরান ও গোলপাতার পারমিটের অনুমতি প্রদান করা হতো। এ কারণে সুন্দরবনে বাওয়ালীর সংখ্যা অর্ধেক নেমে আসে। প্রতিমধ্যে সুন্দরী কাঠ কাটার পারমিটও বন্ধ করে দেওয়া হয়। সিডরের পর গরানের পারমিট বন্ধ করা হলেও এখন পর্যন্ত তা বহাল রয়েছে। আর সেই থেকে হাজার হাজার বাওয়ালী চরম বির্পযয়ের মধ্যে দিয়ে সিমাহীন কষ্টের মধ্যে দিনতিপাত করে আসছে। নলিয়ান এলাকার বাওয়ালী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের নোটাবেকি, পুষ্পকাটি, আগুনজালা, দোবেকি, কলাগাছি, জামতলা, কদমতলা, বনাঞ্চলে প্রচুর গরান গাছ জন্মেছে। অপরদিকে খুলনা রেঞ্জের চালকি, আন্দার মানিক, গেওয়াখালী, পাটকোষ্টা, হংসরাজ, নীলকোমল, শোলকমনি এলাকায় গরান দেখা গেছে প্রচুর। এখন গরানের পারমিট দিলে বনের কোন ক্ষতি হবেনা। কয়রা উপজেলার ৪নং কয়রা গ্রামের বাওয়ালী শফিকুল ইসলাম সানা বলেন, দীর্ঘদিন গরান না কাটায় সুন্দরবনের সর্বত্রই ব্যাপকভাবে গরানের বিস্তার ঘটেছে। আর ব্যাপকভাবে গরানের প্রভাব পড়ায় ঐ সকল এলাকায় অন্য গাছ বংস বিস্তার কাজে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সুন্দরবন বাওয়ালী ফেডারেশনের সভাপতি মীর কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, প্রতি বছর গরান না কাটলে গাছের ঝোপ ঝাপড়ায় সুন্দরবনের অন্য প্রজাতির গাছ জন্মাতে বিঘœ ঘটে। এ ছাড়া গরান গাছ না কাটায় অন্যান্য প্রজাতির গাছ স্বাভাবিক গতিতে বেড়ে উঠতে পারেনা। দ্রুত গরান কর্তন না করা হলে বয়স ভিত্তিক সর্ববৃহৎ গরান বাগান ধংবসের আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া মন্ত্রনালয়ের গেজেট অনুযায়ী অপ্রধান গাছ গরান কাটা যাবে বলে উল্লেখ করা আছে। বিষয়টি বিবেচনা এনে অবিলম্বে গরানের পারমিট চালুর দাবি জানান তিনি। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের (ডিএফও) ড.আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেন, গরানের পারমিটের বিষয়টি মন্ত্রনালয়ের ব্যাপার। মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা না পেলে গরানের পারমিট দেওয়া সম্ভব হবেনা। কয়রা-পাইকগাছার সংসদ সদস্য আলহাজ¦ মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার বাওয়ালীদের কথা চিন্তা করে গরানের পারমিট দেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রনালয়ে সুপারিশ করা হবে।