শেরপুরের নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন তার বাড়ির পাশে এক খন্ড পতিত জমিতে বছরে ৭/৮ বার বিভিন্ন শাক চাষ করে এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে এ বছর লাল শাকের আয়ে যেন তার জীবন রঙিন হয়ে উঠেছে। মাত্র ১৫ শতাংশ জমিতে বিভিন্ন শাক, সবজি, মসলা জাতীয় ফসলের আবাদ করে লাভবান হয়ে তিনি এখন এলাকায় আদর্শ কৃষক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই শাক-সবজি আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে স্বল্প কালীন শাক সবজি চাষে কৃষকের আগ্রহ আকাশচুম্বী। অল্প ব্যয়ে ও নাম মাত্র শ্রমে একই জমিতে বার বার শাক সবজি আবাদে সফলতা পেয়ে স্বল্প কালীন শাক সবজি চাষ করা তার যেন নেশাতে পরিনত হয়েছে। তিনি সারা দিন তার ১৫ শতাংশ জমিতেই কাটান। এতে করে একদিকে যেমন আয় হচ্ছে, অন্যদিকে শরীর ও মন সুস্থ্য থাকছে।
সরেজমিনে বানেশ্বরদী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে গত কয়েক বছর আগেও যে জমি পতিত ছিল, সেই পতিত থাকা ১৫ শতাংশ জমিতে লাল শাক, সরিষা শাক, পালং শাক, লাউ শাকসহ বিভিন্ন শাক ও মুলা, টমেটো, পাতা কফি, ফুল কফিসহ বিভিন্ন সবজি এবং ধনিয়া, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন মসলা জাতীয় ফসল চাষ করার পাশাপাশি ওই জমির আইলে ও অন্যান্য ফসলের ফাঁকে কলার গাছ লাগিয়েছেন কৃষক আবুল হোসেন। তার এই ১৫ শতাংশ জমি যেন লাল সবুজের সমরোহে পরিণত হয়েছে।
আবুল হোসেন বলেন, একই জমিতে স্বল্প কালীন শাক সবজি বছরে অন্তত ৭/৮ বার চাষ করা সম্ভব। এতে অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভ বেশি পাওয়া যায়। তিনি কৃষি বিভাগের পরামর্শে ২০১৯ সালে তার নিজের ১৫ শতাংশ জমিতে স্বল্প কালীন বিভিন্ন শাক সবজি ও মসলা জাতীয় ফসলের আবাদ করে বাড়তি আয় করায় সে অধিক আগ্রহী হয়। পরে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে সেই জমিতে স্বল্প কালীন শাক সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল চাষ শুরু করেন। ওই বছর কমপক্ষে ৬ বার বিভিন্ন শাক চাষ করেন। এতে বছরে অন্তত অর্ধলক্ষাধিক টাকা আয় হয়। তিনি জানান, প্রথম অবস্থায় ওই পতিত জমিকে আবাদের উপযোগী করা, জৈবসার, বীজ ও শ্রমিক বাবদ তার প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রথম মাসে চাষ করা শাক বিক্রি করে তার ব্যয় উঠে আসে। এরপর জমি তৈরী বাবদ উল্লেখযোগ্য খরচ না হওয়ায় শাক সবজি বিক্রি থেকে লাভের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তিনি ওই জমিতে চলতি বছর এ পর্যন্ত ৬ বার স্বল্প কালীন শাক-সবজি চাষ করেছেন। এরমধ্যে লাল শাক চাষ করেছেন ৪ বার। ৬ আবাদে তিনি প্রায় ৩৫ হাজার টাকার বিভিন্ন শাক ও সবজি বিক্রি করেছেন। শীতকালীন বিভিন্ন শাক সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল থেকে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা আয় হবে বলে তিনি আশা করছেন। উল্লখযোগ্য বিষয় হল, আবুল হোসেন শাক সবজি চাষে কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেনি। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পোকা ও রোগ বালাই দমন করেন এবং গোবর ও কম্পোষ্টসারসহ বিভিন্ন জৈব সার ব্যবহার করেন। ফলে তার উৎপাদিত শাক সবজি ও অন্যান্য ফসল সম্পূর্ণ নিরাপদ। তার উৎপাদিত শাক সবজি ও ফলের চাহিদা ও দাম অন্যান্যের তুলনায় একটু বেশি।
বানেশ্বরদী ব্লকে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, বানেশ্বরদীর আবুল হোসেনসহ অন্যান্য কৃষককে একই জমিতে এক ধরনের ফসল চাষ না করার জন্য নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কারণ একই জমিতে বার বার একই ফসল চাষ করলে জমির উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। শাক সবজি চাষিদের যেকোনো সমস্যায় দ্রুত সমাধান দিতে কৃষি বিভাগ সদা তৎপর রয়েছে। তাছাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ নিয়মিত কৃষকের মাঠ পরিদর্শন করছেন।
নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবদুল ওয়াদুদ বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় এক হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে শাক সবজি চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হলেও, লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৭০ হেক্টর বেড়ে অর্জন হয়েছে এক হাজার ৭৯০ হেক্টর। বাড়ির আঙ্গীনায় চাষ করা শাক সবজিসহ হিসেব করলে এর পরিমাণ আরও বেশি হবে। সরকারি প্রণোদনার আওতায় বাড়ির পাশে ২৮৮টি পারিবারিক পুষ্টি সবজি বাগান স্থাপন করা হয়েছে। কৃষকদের মাঝে সচেনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন কৃষি আবাদের উপর মাঠ দিবস, কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন ও কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।