বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন পদত্যাগ করায় এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
গত ১০ ডিসেম্বর শনিবার ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ থেকে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্তে সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এরপর গত রোববার (১১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।
জানা গেছে, বগুড়ার নন্দীগ্রাম-কাহালু উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৪ আসন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসন থেকে মোশারফ হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দীর্ঘ একবছর নানা নাটকীয়তার পর ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করেন তিনি।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া বিএনপির রাজনীতিতে বরাবরই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান। নন্দীগ্রাম-কাহালু আসনটি বলা হয় বিএনপির দূর্গ। তবে হয়নি কাঙ্খিত কোনো উন্নয়ন। তারপরও স্থানীয় বিএনপির দলীয় এমপিদের মাধ্যমে কিছু রুটিন উন্নয়ন কাজ হয়েছে। কিন্তু তাদের পদত্যাগে সেই উন্নয়নও মুখ থুবড়ে পড়বে।
পদত্যাগের পর মোশাররফ হোসেন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এলাকাবাসীর সঙ্গে সারাজীবন থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে একটি পোস্ট দেন। তাতে তিনি লিখেছেন, বগুড়া-৪ নির্বাচনী এলাকার সম্মানিত ভোটার সহ সকল সাধারণ, দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে আমার আবেদন, দলীয় মনোনয়ন, আপনাদের ভালবাসা এবং ভোট নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। প্রায় সাড়ে তিন বছর সংসদ সদস্য হিসেবে আপনাদের সঙ্গে চলা ফেরা করতে গিয়ে কখনো যদি কেউ কোন কিছুতে আমার দ্বারা, কোন কথায়, আঘাত বা কষ্ট পেয়ে থাকেন তার জন্য আন্তরিকভাবে/বিনয়ের সঙ্গে, আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এই অল্প সময়ে আপনাদের অনেক ভালবাসা সহযোগিতা পেয়েছি যা সারা জীবন আমি ও আমার পরিবার মনে রাখবো। দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়েই সংসদ থেকে হাসি মুখে পদত্যাগ করেছি। দলের যে কোন সিদ্ধান্ত, সব সময় মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত আছি। ইনশাআল্লাহ বিগত সময় আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, এখনো আছি, ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও আপনাদের পাশে থাকবো। আমি এমপি হওয়াার পরও অতি সাধারণ ভাবে ছিলাম। এখনো সাধারণভাবে সারা জীবন আপনাদের সঙ্গে মিশে থাকতে চাই।
এদিকে জনগণের ভোট নিয়ে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন পদত্যাগে সাধারণ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের মতে, রাজনীতির খেলার মাঠে রাজনৈতিক দলের যত খেলা আছে খেলুক, কিন্তু জনগণকে নিয়ে খেলা তাদের উচিত নয়। এ ছাড়া তার পদত্যাগে নিজ দল থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ একদিকে যেমন খুশি হয়েছেন অন্যদিকে তার উন্নয়ন নিয়েও হচ্ছে আলোচনা-সমালোচনা।
নন্দীগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি একে আজাদ বলেন, এই পদত্যাগ করা আগেই উচিত ছিল। কারণ সরকারের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এ মুহূর্তে এসে পদত্যাগের কোনো গুরুত্ব বহন করে না।
ভ্যানচালক হযরত আলী বলেন, ‘জনগণ তাকে ৫ বছরের জন্য ভোট দিয়ে সংসদে পাঠিয়েছিল। তাই পূর্ণ সময় তার সদস্যপদ বহাল রাখা উচিত ছিল।’
নন্দীগ্রামের সিএনজিচালক আল-মামুন বলেন, বিএনপির এমপি পদ থেকেই এলাকার জনগণের কী লাভ। লাভ তো এমপির সঙ্গে সব সময় থাকে তাদের। পদত্যাগ করেছে আমরা আবার ভোট দিতে পারব।
কাহালু বাজারের রুহুল আমিনসহ অনেকে জানান, এমপি মোশারফ পদত্যাগ করায় জনগণ খুশি। উপ-নির্বাচন হলে জনগণ আবার ভোট দিয়ে নতুন এমপি নির্বাচিত করতে পারবে।
এ ব্যাপারে সদ্য পদত্যাগী এমপি মোশারফ হোসেনের সঙ্গে বার বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।