ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকের কৃষি জমির মাটি কেঁটে সাবাড় করছে। যে কারণে মাটি কাটার ফলে কৃষি জমি তার উর্বরতা হারাচ্ছে অন্যদিকে কৃষক তার জমিতে ভাল ফসল ফলাতে পারছেন না। ফলে মাটি ব্যবসায়ীরা দিন দিনা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
জানা যায়, কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি এবং কৃষি জমিতে পুকুর খনন সম্পূণ সরকারীভাবে নিষিদ্ধ হলেও কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না মাটি ব্যবসায়ীরা। কৃষকদের ভ’লভাল বুঝিয়ে মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের জমির মাটি কিনে সেই মাটি বিক্রি করছে বিভিন্ন ইট ভাটাতে। আবার কিছু কিছু ব্যক্তি গর্ত ভরাট করছে এসব মাটি ক্রয় করে। কৃষি জমি থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক মাটি অবৈধভাবে ইট ভাটায় প্রবেশ করলেও ব্যবস্থা নেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে মাটি ব্যবসায়ীদের দাবি কোন কৃষক যদি তার কৃষি জমি সমান(লেবেল) করার বিনিময়ে তাদের মাটি দেন এখানে প্রশাসনের বা অন্য পক্ষের করার কি আছে।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়,মাটি ব্যবসায়ীরা আবাদি জমির টপ সয়েল কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইটের ভাটায়। ৬নং সারুটিয়া ইউনিয়নের নবগ্রাম, ৮নং ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের চরধলহরা,ছোট ধলহরা,কুশবাড়িয়া,পাইকেনপাড়া,৯নং মনোহরপুর ইউনিয়নের দামুকদিয়া, মাধবপুর, উমেদপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর,পৌর এলাকার সাতগাছি গ্রাম,আবাইপুর ইউনিয়নের কৃপালপুর গ্রাম, হাকিমপুর ইউনিয়নের বরিয়া গ্রাম মাঠ, কাচেরকোল ইউনিয়নের হামদামপুর এলাকার জিকে খালের পাড় ও কুমার নদীর চর সহ বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন মাঠে কৃষকের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে অবাধে কৃষি জমির মাটি কেঁটে বিক্রি করছে মাটি ব্যবসায়ীরা।সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে ট্রাক্টর আর তাতে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ভরাট করা হচ্ছে।এসব মাটির বেশীর ভাগ যাচ্ছে ইট ভাটাগুলোতে।আবার দেখা যায় কেউ কেউ কৃষি জমিতে পুকুর কাটছে।
মাটি ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম বলেন, কৃষকের সাথে চুক্তি করেই তারা কৃষি জমির মাটি নিয়ে থাকেন। কৃষি জমির মাটি কাঁটার কোন বিধি নিষেধ নেই। শুধু পুকুর খনন করলে প্রশাসনের একটু জানালেই হলো বলে তিনি জানান।
ছোটধলহরা মাঠের আবদুল মালেক নামের এক চাষি বলেন, তিনি তার একটি উঁচু জমির মাটি কেঁটে ধানের জমিতে পরিনত করেছেন। মাটির বিনিময়ে মাটি ব্যবসায়ীরা তাকে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা দিয়েছেন। এভাবে তাদের মাঠের অনেক কৃষক সবজি ক্ষেত ধানের ক্ষেতে পরিনত করছেন। তিনি আরো বলেন, তাদের মাঠে কোন কোন কৃষক প্রতি ট্রাক্টর মাটি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে।
নবগ্রাম গ্রামের চাষি সমসের আলী জানান, অর্থের প্রলোভনে দেখিয়ে মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের জমির টপ সয়েল কেটে নিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে তাদের মাঠের সবজি ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে।এছাড়াও তার পাশের জমির মাটি কেটে নীচু করলে বাধ্য হয়ে উঁচু জমি ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে তাকেও একই কাজ করতে হচ্ছে বলে জানান। কয়েক বছরের মধ্যে এভাবে তার মাঠের সবজি চাষ উঠে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
দামুকদিয়া মাঠের কৃষক রাশেদ মিয়া বলেন, তিনি তার জমিটা লেবেল করার জন্য মাটি কাঁটার অনুমতি দিয়েছেন যা মাটি ব্যবসায়ীরা ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেঁটে নিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কাঁটা নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান বলেন, কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি যাকে টপ সয়েল বলে। এ মাটি কাঁটলে জমি তার উর্বরতা হারায়। কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি এবং কৃষি জমিতে পুকুর খননের উপর বিধি নিষেধ থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা তাদের নাই। তিনি উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলবেন বলে জানান।
এব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এসিল্যান্ড বনি আমিন বলেন, কোন অবস্থাতেই কৃষি জমির উর্বর মাটি নষ্ট করা যাবে না। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।