নীলফামারী ডিমলায় দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় বসবাসরত গরীব দুঃখি মানুষের (যে সকল) বাড়ীতে বন্যার সময় বন্যার পানি প্রবেশ করে বাড়ীঘর তলিয়ে যায়। সে সকল বাড়ী ভিটা উঁচু করনের নাম করে গ্রাম বিকাশ (সহায়তা এবং পুঃনবাসন কর্মসূচী) নামক এনজিও’র মাধ্যমে টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক তিস্তা নদীর বেশকিছু পয়েন্টে কয়েকটি বোমা মেশিন বসিয়ে নিজ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গত প্রায় দুমাস যাবত দিনের বেলা বালু উত্তোলন ও রাতের বেলা পাথর উত্তোলন করে বালু পাথর বিক্রয় করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
প্রশাসনিক ভাবে কোন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহন না করায় বোমা মেশিন বসিয়ে বালু পাথর উত্তোলনের কারণে তিস্তা অববাহিকায় জেগে ওঠা চড়ের আবাদি ফসলি জমি ফসলসহ ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে।
নাম প্রকাশে ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক পরিবারের অভিযোগ ময়নুল চেয়ারম্যান দিনের বেলায় বালু ও রাতের আঁধারে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের কারণে আমাদের জায়গা জমি ফসল সহ ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। এবং আসন্ন বষৃা মৌসুমে বোমা মেশিন দিয়ে বালু পাথর উত্তোলনের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে বন্যার পানিতে নতুন করে কয়েকটি গ্রামের কয়েকশ বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্খা দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, বিষয়টি অত্র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাতি রফিকুল ইসলাম রফিক নিয়ন্ত্রন করছেন। এবং তিস্তা নদীতে বালু পাথর উত্তোলনের বিষয়টি নীলফামারী জেলা প্রশাসক মহোদয় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অবগত রয়েছেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ময়নুল চেয়ারম্যান নিজের নেতৃত্বেই পাথর বালূ উত্তোলন করছেন। আমি সেখানে দিন চুক্তিতে ১০ দিনের জন্য একটি মেশিন ভাড়া দিয়েছিলাম মাত্র। আমি ক্ষমতাসিন দলের একটি ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বে রয়েছি অবৈধভাবে বালু পাথর উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ন্ত্রন করার প্রশ্নই ওঠেনা। দীর্ঘদিন ধরে কয়েকটি বোমা মেশিন দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলন করায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ”টি বাঁধ” (গ্রোয়িং বাঁধ) সহ শতাধিক বসতভিটা, ফসলি জমি, পুকুর ও জলাশয় হুমকির মুখে পড়েছে। এবং নদীর তীরবর্তি এলাকায় ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।
ডিমলা গ্রাম বিকাশ (সহায়তা এবং পুঃনবাসন কর্মসূচী)’র টেকনিক্যাল অফিসার শাজাহান আলী বলেন, আমাদের প্রতিটি বাড়ী উঁচু করনের জন্য ৮ হাজার ঘনফুট (সেপ্টি) মাটি বরাদ্দ থাকলেও প্রতিটি রিরিহ জনগণকে সাহায্যের নামে বাড়ী প্রতি ৪০ হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন কোটি কোটি টাকার বানিজ্য করছেন চেয়ারম্যান ময়নুল হক।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, আমি গত দুদিন আগে জানতে পারি তিস্তা নদী হতে নদী বেষ্টিত এলাকার গরীব অসহায় এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বসতভিটা উঁচু করার জন্য ডিমলা গ্রাম বিকাশ (সহায়তা এবং পুঃনবাসন কর্মসূচী)’র আওতার নামে বালু পাথর উত্তোলন করে বিক্রয়ের বিষয়ে অভিযোগ আসার সাথে সাথেই আমি মেশিনগুলি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। তারপরেও পাথর বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত বোমা মেশিন বন্ধ করা না হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য ২০০৯ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বোমা মেশিন নিষিদ্ধ করেন উচ্চ আদালত। আইনে বলা হয়েছে, বালু মহাল এবং মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী পাম্প বা অন্য কোন মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাইবে না। ওই আইনের (৩) উপ-ধারা (২) এ উল্লেখ রয়েছে ড্রেজিং কার্যক্রম বাল্কহেড বা প্রচলিত বলগেট ড্রেজার ব্যবহার করা যাইবে না। এবং সর্বোপরি এভাবে বালু উত্তোলন আইনত দন্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচ্য হবে। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ভারতের উত্তরা রাজ্যের হাইকোর্ট এক যুগান্তকারী রায়ে গঙ্গা ও যমুনা নদীসহ বাস্তবতন্ত্রকে জীবন্ত মানুষের মর্যাদা দিয়েছে। ফলে মানুষের যে সমস্ত আইনি অধিকার রয়েছে, এসব নদীরও তেমনি আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অবৈধ বালু উত্তোলনসহ অন্যান্য দূষণ থেকে নদীকে বাঁচাতে যুগান্তকারী এ রায় দেওয়া হয়। এছাড়াও সেতু, কালভার্ট, রেললাইনসহ মূল্যবান স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা বেআইনি। অথচ টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হকসহ গ্রাম বিকাশ (সহায়তা এবং পুঃনবাসন কর্মসূচী)’র টেকনিক্যাল অফিসার শাজাহান আলী সরকারি ওই আইন অমান্য করে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কয়েক কোটি টাকায় নির্মিত ”টি” বাঁধের” কয়েক শত গজ দূরে থেকে বোমা মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক প্রকাশ্যে সাংবাদিকদেও নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির হুমকি প্রদান করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, পাথর বালু উত্তোলন দস্যুরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বাধা দেয়ার সাহস পায়না। বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধের ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। অবৈধ পাথর বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে নদী তীরবর্তী বাড়িঘর, ফসলি জমি ভাঙ্গন ও পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।