বগুড়ার শেরপুরের আয়রা গ্রামে মুজিব শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৪০ দিনের কর্মসূচি প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো, ভরাট কাজে বালির পরিবর্তে মাটি ব্যবহার করা, ফসলী জমি কেটে পুকুর খনন করা সহ প্রকল্পটির নানা অনিয়ম দেখা গেছে। এ যেন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে পুকুর চুরি।
উপজেলা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের আয়রা গ্রামে বরাদ্দকৃত ৩৪ টি ঘরের মধ্যে ২৪টি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। প্রতিটি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের আবাসনের জন্য দুই শতাংশ জমিসহ ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। নকশা অনুযায়ী সাড়ে ১৯ ফুট ও ২২ ফুট আট ইঞ্চি সাইজের দুই রুম বিশিষ্ট মুল ঘরের সাথে বারান্দা, রান্নাঘর ও টয়লেট আছে। এর জন্য ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা ছাড়াও মালামাল পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত পাঁচ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণ কাজের শ্রমিকের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকলেও কাজ করানো হচ্ছে সরকারের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (৪০ দিনের কর্মসূচি) প্রকল্পের শ্রমিকদের দিয়ে। এমনই একজন শ্রমিক রাজবাড়ি গ্রামের আছিয়া বেগম বলেন, “আমি ৪০ দিনের কর্মসূচীর শ্রমিক। অফিসের নির্দেশে আমরা ১০ জন গত তিন দিনধরে এখানে কাজ করছি। “একই কথা বলেছেন মালা বেগম ও প্রমিলা রানী।
সিডিউল অনুযায়ী ঘরের মেঝে বালি দ্বারা পুরণ করার কথা থকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলী জমির মাটি। এজন্য আইন অমান্য করে তিন ফসলী জমিতে একটি পুকুর খনন করা হয়েছে।
প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিক হরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “বালি কিনতে অনেক টাকা লাগে। তাই খাসজমি খনন করে মাটি আনা হচ্ছে।”
ওই এলাকার আবদুর রশিদ বলেন, “এই জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছিল। প্রকল্পের ঘরের মাটির প্রয়োজনে প্রায় ১ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। এভাবে সরকারি লোকজনই আইন ভঙ্গ করছেন।”
জানতে চাইলে প্রকল্পের সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামছুন্নাহার শিউলী বলেন, “আমি সদস্য সচিব হলেও কাজটি ইউএনও স্যার নিজেই দেখেন। তাই কোন মন্তব্য করতে পারব না।”
উপজেলা প্রকৌশলী লিয়াকত আলী বলেন, “আমি এই প্রকল্পের সদস্য হলেও নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় বা কোন কাজে আমাকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। তাই আমি বিশেষ কিছু বলতে পারব না।”
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা বলেন, প্রকল্পের সিডিউল অনুযায়ী কাজ করা হবে। ৪০ দিনের কর্মসূচি প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে তা আমার জানা নেই।