খুলনার পাইকগাছায় লবণাক্ত মাঠে মাঠে সরিষা হলুদ ফুলের মৌ মৌ গন্ধ পথিক কে বিভোর করছে। পৌষের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষা ফুল। শীতের শিশির ভেজা সকালে ঘণ কুয়াশার চাদরে মোড়ানো মাঠ জুড়ে কেবল চোখে পড়েছে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। পৌষের শীতের এই শিশির ভেজা সকালে সরিষার সবুজ গাছের হলুদ ফুলগুলো সোনা ঝরা রোদে যেন ঝিকিমিকি করছে। এ যেন এক অপরূপ সৌন্দর্য। যেন প্রকৃতি কন্যা সেজেছে হলুদ বরণ সাজে। উপজেলার অধিকাংশ ফসলের মাঠ লবণাক্ত। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভার মধ্যে সরিষা চাষ হয় হরিঢালী, গদাইপুর, কপিলমুনি, গড়-ইখালী, চাঁদখালী ইউনিয়নে। তবে পৌরসভাসহ অন্য ৫ ইউনিয়নে লোনা পানির চিংড়ি চাষ বেশী হয়। চারপাশে শুধু সরিষা ফুলের মৌ-মৌ গন্ধে বিভোর ফসলের মাঠ। সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে যেমনই প্রকৃতির রূপ বদলায়, তেমনি বদলায় ফসলের মাঠ। কখনো সবুজ, কখনো সোনালী, কখনো বা হলুদ। এমনই ফসলের মাঠ পরিবর্তনের এ পর্যায়ে হলুদ সরিষা ফুলের চাদরে ঢাকা পড়ছে এ ফসলের মাঠ। সরিষা প্রধানত আবাদ হয় দোঁআশ ও বেলে-দোঁআশ মাটিতে। বর্তমানে সরিষা একটি লাভজনক ফসলে পরিণত হওয়ায় ধীরে ধীরে সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাঢ় হলুদ বর্ণের সরিষার ফুলে ফুলে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহে গুঞ্জন করছে। চলছে মধু আহরণ। মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ মাঠে নেমেছে। শীতের শিশির সিক্ত মাঠভরা সরিষা ফুলের গন্ধ ভাসছে বাতাসে। সরিষার মাঠ দেখে মনে হয় কে যেন হলুদ চাদর বিছিয়ে রেখেছে। হেমন্তকালের মাঠে মাঠে সবুজের অপার সমারোহ এখন আর নেই। দিগন্ত জুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য শোভা পাচ্ছে মাঠে মাঠে। উপজেলার কয়েকজন কৃষক এফএনএসকে জানান, গত বছর সরিষার দাম ভালো ছিল। সরিষা অল্প খরচে বেশি লাভজনক ফসল। সরিষার চাষ পদ্ধতি খুব সহজ ও কম খরচে অল্প সময়ে খুবই লাভ জনক ফসল। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে জমিতে সরিষা বীজ বপন করা হয়। কপিলমুনি ইউনিয়নের কৃষক নুর-আমিন এফএনএসকে জানায়, দেশীয় সরিষার জাতগুলোর চেয়ে উন্নত জাতগুলো ফলন বেশি হয়। গত বছরের চেয়ে এ বছর সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন এ বছর বাজারও ভালো যাবে। এবার ৫ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো ফসল ঘরে তুলবে বলে জানান তিনি। হরিঢালী ইউনিয়নের কৃষক আমির সরদার এফএনএসকে জানান, সেচ ও সার কম লাগে। তাছাড়া সরিষার পাতা একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার। প্রতি বিঘায় ৪ থেকে ৫ মন সরিষা হয়ে থাকে। সময়ের সাথে সাথে উপজেলায় বাড়ছে সরিষা আবাদ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম এফএনএসকে বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৭০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এছাড়াও সম্পূরক রবিশস্য হিসেবে সরিষা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে সরিষা বীজ প্রদান করা হয়েছে। এরইমধ্যে চাষকৃত সরিষার বেশির ভাগেই ফুল এসে গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এবার সরিষা আবাদি কৃষকরা বাড়তি মুনাফা পাবে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।