শুভ বড়দিন। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর খ্রিষ্টান সম্প্রদায় মহান যিশুখ্রিষ্টের পবিত্র জন্মদিন উদ্যাপন করছে। এই উদ্যাপন আনন্দময়, এই আনন্দের সঙ্গে জড়িয়ে আছে যিশুর শান্তির বাণী। ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা, সহমর্মিতা, উদারতা, কৃতজ্ঞতা-এসব উৎকৃষ্ট মানবিক গুণ অর্জনের জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে উন্নততর মানবিক সম্পর্ক ও সমৃদ্ধতর সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান নিয়ে আসে বড়দিন। আজ থেকে ২০১৮ বছর আগে যিশু এসেছিলেন মানবজাতির ত্রাণকর্তারূপে। হিংসা, বিদ্বেষ, পঙ্কিলতার পথ থেকে মানুষকে উদ্ধার করে তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন ভালোবাসা, করুণা, মিলন ও সুন্দরের পথ। যিশুর জন্মদিন শুধু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্যই আনন্দের। যিশু যে মানবিক আদর্শের বাণী প্রচার করে গেছেন, তা সর্বকালে জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর শান্তির বাণী শাশ্বত। যিশুর আহ্বান ও আত্মত্যাগ সব অশুভ ও অসুন্দরের বিরুদ্ধে। আর্তপীড়িতদের প্রতি তিনি তাঁর শান্তির পরশ বুলিয়ে দিতেন। সংযম-সহিষ্ণুতা, ভালোবাসা ও সেবার পথ ধরে মানুষকে সত্য ও কল্যাণের পথে আনার প্রয়াসে যিশুকে অবর্ণনীয় নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছিল। কিন্তু সত্য ও কল্যাণের পথ থেকে কোনো কিছুই তাঁকে বিচ্যুত করতে পারেনি। নিপীড়কের বিরুদ্ধে তিনি পাল্টা আঘাতের কথা বলেননি; তিনি অকাতরে ক্ষমা করেছেন, আর সমগ্র মানবজাতির হয়ে সব দুঃখ-যন্ত্রণা যেন একাই আত্মস্থ করতে চেয়েছেন। পাশবিকতাকে জয় করে প্রকৃত মানব হয়ে ওঠার জন্য যিশুর শিক্ষা বিরাট পাথেয়। যিশু আশাহীন মানুষকে দিয়েছেন আশা; জীবনসংগ্রামে পর্যুদস্ত মানুষকে জুগিয়েছেন জীবনজয়ের অনুপ্রেরণা। যুদ্ধ ও অশান্তির বিপরীতে তিনি মানুষকে ডেকেছেন মমতা, ভালোবাসা ও মিলনের পথে। মুসলমানদের কাছেও যিশুখ্রিষ্ট গভীর শ্রদ্ধার পাত্র। তিনিই ইসলাম ধর্মের নবী হজরত ঈসা (আ.)। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান হলেও এই দেশ বিপুলসংখ্যক খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী মানুষের স্বদেশ। অনাদিকাল ধরে বাংলার মুসলমান সমাজ খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে ঐক্য ও সম্প্রীতির এক অপূর্ব মেলবন্ধনের ধারা চলমান রেখেছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে তাদের অবদান উল্লেখযোগ্য, এমনকি সেবাধর্মী কাজে তারা মানবিকতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর বজায় রেখে চলেছে। বড়দিন বা যিশুখ্রিষ্টের পবিত্র জন্মতিথিতে আমরা বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানাই। এ উপলক্ষে ধর্ম-বর্ণ-জাতিনির্বিশেষে গোটা মানবজাতিরই কল্যাণ ও মুক্তি কামনা করি আমরা। যিশু যেমন তাঁর জীবন দিয়ে অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ থেকে মুক্ত করেছিলেন মানুষকে; যেভাবে মানুষের সব শোক-দুঃখের ভার গ্রহণের জন্য আত্মত্যাগ করেছিলেন; তেমনই মানুষের মধ্যে মুক্তি ও ত্যাগের চেতনা ছড়িয়ে পড়ুক -এই প্রত্যাশাই আমরা করি। যিশুর সংযম, সহিষ্ণুতা ও ভালোবাসার শিক্ষা হোক সবার পাথেয়। পৃথিবী থেকে দূর হোক হিংসা ও অশান্তি। শুভ বড়দিন।