রেজুলেশনের খাতা কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে পুনঃ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোনয়ন, বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে প্রায় পৌণে এক কোটি আত্মসাতের চেষ্টা। জমি ও পুকুর লিজের অর্থ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের কাজে না লাগানোসহ নানা অভিযোগ উঠেছে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে। এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের জামুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায়।
এদিকে পরিচিতি সভার মিটিং ছাড়া আর কোন মিটিং হয়নি বলে দাবী করছে ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্যরা। অন্যদিকে সভাপতি’র কৌশলে হাতিয়ে নেয়া সাদা রেজুলেশন উদ্ধারে থানায় জিডি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ আর এম আজাদুর রহমান। তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোশারফ হোসেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সাথে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অভিভাবক সদস্যদের সৃষ্ট বিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও শিক্ষা ব্যবস্থা নাজুকে পরিণত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার(২২ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ১৯৪৫ সাল থেকে এবতেদায়ী শাখার শুরু হয়ে মাদ্রাসাটি জামুর ইসলামীয়া আলিম মাদ্রাসায় পরিণত হয়েছে। একই গ্রামে কলেজ ও হাইস্কুল থাকায় বর্তমানে এ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি উন্নয়নের জন্য বেশ কয়েকটি ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান কমিটির অনুমোদন হয় চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল। ম্যানেজিং কমিটিতে পার্শ্ববর্তী গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেন পুনরায় সভাপতি এবং মো. আবু সাঈদ, একরাম হোসেন, ফিরোজ আলম, রফিকুল ইসলাম ও আকলিমা বেওয়া অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হয়। সে অনুযায়ী ওই মাসের শেষে নতুন কমিটির সভাপতি মোশারফ হোসেনের নির্দেশে এক পরিচিতি সভার মিটিং আহবান করে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ আর এম আজাদুর রহমান। পরবর্তীতে ওই কমিটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষসহ ৭টি শূণ্য ও সৃষ্ট পদের জন্য গত ৭ জুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অধ্যক্ষ পদে ২৫টিসহ মোট ৯৫টি আবেদন করে চাকুরী প্রত্যাশীরা। কিন্তু আবেদনপত্রগুলো যাচাই-বাচাই না করেই অজ্ঞাত কারণে কৌশলে সভাপতি মোশারফ হোসেন ও শিক্ষক প্রতিনিধি এম এ মান্নান রেজুলেশন খাতা অফিস কক্ষ থেকে নিয়ে যায়। তবে ওই রেজুলেশন খাতায় পূর্বের পরিচিতসভায় উপস্থিত অভিভাবক ও শিক্ষকদের সাক্ষর দেয়া থাকলেও কার্যবিবরণী লেখা ছিলনা বলে দাবী করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। পরবর্তীতে রেজুলেশন খাতা উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে এবং উদ্ধারের জন্য ৭ জুন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন ও ৫ আগস্ট শেরপুর থানায় ২৩৬ নং জিডি করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ আর এম আজাদুর রহমান। এদিকে আবেদনের প্রেক্ষিতে রেজুলেশন খাতায় কার্যবিবরণী ফাঁকা রয়েছে মর্মে উল্লেখ করে খাতা ফেরত দিতে সভাপতিকে একটি চিঠি দেয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ নজমুল ইসলাম।
উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রেজুলশনের খাতায় পুনরায় অভিভাবক সদস্যদের সাক্ষর জালিয়াতি(স্ক্যান) করে পুনরায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে শিক্ষক প্রতি এম এ মান্নান কে পদায়ন করে। এরপর প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অধ্যক্ষ পদে(সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ আর এম আজাদুর রহমান)সহ কতিপয় চাকুরী প্রত্যাশীদের নিকট থেকে গোপনে প্রায় ৭০ লক্ষাধিক টাকা উৎকোচ গ্রহন করে। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সাথে বনিবনা না হওয়ায় এবং দীর্ঘদিন ধরে(আবেদনের ৬ মাসেও) আইনি জটিলতায় নিয়োগ দিতে পারিনি সভাপতি। এর প্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মাধ্যমে পূর্বের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’র আবেদনগুলোর মূল্যায়ন না দিয়ে পুনরায় গত ৭ ডিসেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এবং অবৈধপন্থায় নিয়োগের দানের পায়তারা অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করছে সভাপতি এমনটাই দাবী করেছেন বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্যরা।
ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিরঅভিভাবক সদস্য মো. আবু সাঈদ, একরাম হোসেন, ফিরোজ আলম, রফিকুল ইসলাম বলেন, কমিটি অনুমোদনের পর প্রথম সভা হয়েছে। তবে ওই সভায় রেজুলেশন খাতায় শুধু সাক্ষর করা হয়েছিল। কিন্তু কোন ছিল লেখা হয়নি। এরপরই সভাপতি মোশারফ হোসেন কৌশলে খাতাটি বাড়িতে নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তিনি(সভাপতি) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বাতিল করে পুনরায় নতুনভাবে এম এ মান্নানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করে। এরপর থেকে সভাপতি অবৈধভাবে বিভিন্ন কর্মকা- ও নিয়োগ বাণিজ্যের মেতে উঠে প্রায় ৭০ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছে। এছাড়াও সভাপতি প্রতিষ্ঠানের কোন উন্নয়ন এমনকি গত বিজয় দিবস উদযাপন করেনি বলেও অভিযোগ তোলেন। তবে সভাপতি’র নানা অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুষ্ঠ তদন্ত ও অপসারণ দাবী করে ম্যানেজিং কমিটির ৯ সদস্যরা ২৯ আগস্ট মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের রেজিষ্ট্রার বরাবরে লিখিত আবেদন করেছে।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ আর এম আজাদুর রহমান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রেজুলেশন খাতাটি সভাপতি কৌশলে নিয়ে যায়। এরপর শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য সহ নানা অনিয়ম দুর্নীতিসহ অবৈধপন্থায় আমাকে সরিয়ে শিক্ষক প্রতিনিধি এম এ মান্নানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করেছে। তবে শিক্ষাবোর্ড ও প্রশাসনের যাবতীয় চিঠি আমার বরাবরে প্রেরণ হয়। এমনকি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনকারীদের আবেদনপত্রও তার হেফাজতে রয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। তবে বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র সৃষ্ট জটিলতা নিরসনের জন্য গত ১৭ নভেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের রেজিস্ট্রার সাক্ষরিত চিঠি দেয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। তবে এ চিঠির একমাসেও অদ্যাবধি কোন উদ্যোগ না করায় নানা প্রশ্নের উদয় হচ্ছে অভিভাবক ও সচেতনমহলে।
এ বিষয়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এম এ মান্নান বলেন, আমাকে সভাপতি রেজুলেশনমূলে পদায়ন করেছে। সে মোতাবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। তবে আমিও দায়িত্ব বুঝে নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছি।
এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন বলেন,আমার বিরুদ্ধে অভিযোগতো নতুন কিছু নয়, শিক্ষাবোর্ড, ডিসি-এডিসি সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে। এসব অভিযোগের তদন্ত হয়েছে এবং চলমান রয়েছে। তবে বর্তমানে যাহা কিছু করা হচ্ছে তা কাগজপত্রের বৈধতার সাথে। এখনে বিন্দুমাত্র অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছেনা বলে দাবী করেন।