রোগীদের চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলো নানারকম জীবাণু দ্বারা দূষিত হয়। এগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা না গেলে সেই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। কিন্তু আমাদের দেশে এই বিষয়টিকে অবহেলা করা হয়। হাসপাতাল-ক্লিনিকে ব্যবহৃত বর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনা নেই। আর চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বেহালের বিষয়টি বহুল আলোচিত হলেও এ ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের ৬০ শতাংশ হাসপাতালে বর্জ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই; ৮০ শতাংশ হাসপাতালে নেই বর্জ্য শোধনাগার। জানা যায়, হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ মেডিকেল বর্জ্য নষ্ট বা ধ্বংস না করে সংক্রমিত অবস্থাতেই ভাঙারি দোকান ও রিসাইক্লিং কারখানায় বিক্রি করে দেয়। জানা যায়, হাসপাতালগুলোয় এ বর্জ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পরিবহণে পর্যাপ্ত কর্মী নেই। এ ছাড়া হাসপাতালে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের অপর্যাপ্ত জ্ঞান চিকিৎসা বর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার একটি বড় অন্তরায়। এর নেপথ্যেও রয়েছে দুর্নীতি। টিআইবির হিসাব অনুযায়ী, ৫০ শতাংশেরও বেশি বর্জ্যকর্মী নিয়োগ পেয়েছেন দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে। সরকারি হাসপাতালে বর্জ্যকর্মীর কাজ পেতে ঘুষ দিতে হয়েছে। উদ্বেগজনক তথ্য হলো, ৪০ শতাংশের বেশি বর্জ্যকর্মীর প্রশিক্ষণ নেই; ৬০ শতাংশের বেশি বর্জ্যকর্মী নিজের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ বহু তথ্য জানেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অরাজক পরিস্থিতির অবসানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা সংশোধন করা দরকার। বস্তুত যেকোনো বর্জ্যরে আধুনিক ব্যবস্থাপনার কাজটি জটিল ও ব্যয়বহুল। চিকিৎসা বর্জ্য পরিবেশ বিপর্যয়েরও বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মেডিকেল বর্জ্য যত্রতত্র রাখা হলেও এটি যেন দেখার কেউ নেই। অনেক রোগ ছড়াতে পারে চিকিৎসা বর্জ্যরে অনিরাপদ নিষ্কাশনের কারণে। ব্যবহৃত সিরিঞ্জ দিয়ে ইঞ্জেকশন নেওয়ার কারণে অনেকে দুরারোগ্য রোগে ভুগছেন। এ ছাড়া এসব বর্জ্য সংগ্রহকারীরও অনেকে নানা জটিল রোগে ভোগেন। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিলে এ খাতে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা কঠিন হতে পারে। দেশে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনেক বাধা রয়েছে। এ খাতে উন্নত দেশের মতো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তবে যেটুকু বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেই অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। দেশে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কয়েক হাজার অবৈধ বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার নামে মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছে। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে আলোচিত খাতে উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি ঘটবে না। তাই অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধের পাশাপাশি সরকারি ও বৈধ বেসরকারি চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেন তাদের ব্যবহৃত বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে সেটি তত্ত্বাবধান করতে হবে।