বসুন্ধরা গ্রুপ ৩৭ কৃষকের ঋণের টাকা পরিশোধ করছে এমন খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে কৃষক পরিবারদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়, তারা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কি বলবে আনন্দে,আবেগ আপ্লুত হয়ে এসব কথা বলেন।
ঋণের দায়ে কারাবরণ করা কৃষক আবদুস সামাদ (৬২) বলেন আলহামদুল্লাহ ঋণের দায় ও মামলা থেকে মুক্ত করার জন্য আল্লাহ বসুন্ধরার চেয়ারম্যানের প্রতি আমরা খুব খুশি। এখন আমরা আরামে ঘুমাতি পারব, পুলিশের ভয় ভেঙ্গে গেল, পলা থাহাথেন বাঁচলাম, এখন থেকে মাঠে-ঘাটে আরামে কাজ-কাম করতে পারব।
কৃষক মো: মজনু প্রমানিক বলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যার আমাদের জন্যি যা করিছে নিজের জন্মদাতা বাপও তা করে না, আমরা টাকা শোধ করার পরও জেল খেটেছি, বসুন্ধরা গ্রুপ আমাদেরকে বাচাঁলো, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যন যেন মেলা দিন বাঁচে, মানসের জন্য আরো ভালো কাজ করে সে জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি।
মামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো কৃষক আকতার হোসেন (৬০) বলেন এই বয়সে টাকা শোধ করেও পুলিশের ভয়ে বাড়ি ছারে পলা থাকতে হইছে, এখন আর কোন ভয় নাই, বসুন্ধরা গ্রুপ আমাগরে পাশে আছে, আল্লাহ বসুন্ধরা গ্রুপকে আরো ভালো রাখুক সেজন্যি আল্লার কাছে দোয়া করি।
মামলার জন্যি পুলিশ আতঙ্কে পালিয়ে থাকা কৃষক ওয়াসিম আলী বলেন পুলিশের ভয়ে পলা বেড়াইছি, টাকা দিছি রশিদ পাই নাই, বসুন্ধরা গ্রুপ দুঃখের সময় আমাদের পাশে দাঁড়াইছে এজন্যি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের প্রতি আমরা ঋণি, আল্লাহ যেন তার সারা জীবন বাঁচা রাহে।
মামলার আসামি মো: ছালাম উদ্দিন মারা যান ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি। মো: ছালাম উদ্দিনের ছেলে জুবায়ের হোসেন বলেন আমার বাবা মারা যাওয়ার পরও আমাকে বাবার হয়ে হাজিরা দিতে হয়েছে এজন্য আমরা হতাশ। বসুন্ধরা গ্রুপ ঋণ পরিশোধ করায় আমার বাবা এখন কবরে শান্তিতে ঘুমাতে পারবে, এজন্য বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি আমরা সারা জীবন ঋণী হয়ে থাকব।
কারাবরণ করা কৃষক আবদুস সামাদের স্ত্রী মোছা: মোমেনা খাতুন বলেন আমি ক্যান্সারের রোগী আমার স্বামীকে পুলিশ বিনা কারণে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর, ৪/৫ টা ছেলে-পেলে নিয়ে সারা রাত-দিন কানছি, কোথায় যাব কি করব, কোন কূল কিনারা পচ্ছিলাম না, পরে বসুন্ধরা গ্রুপের আইনি সহায়তায় আমার স্বামী জেল থেকে মুক্তি পায়, এখন আজ শুনলাম তারা ঋণ থেকেও মুক্ত করে দিছে এ আনন্দেও প্রতিক্রিয়া জানানের ভাষা আমার জানা নেই।
বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের প্রিন্সিপাল অফিসার ও পাবনা সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক লিমিটেডর ম্যানেজার কাজী জসিম উদ্দিন বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন এখন উধ্বতম কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির কেন্দ্রীয় সভাপতি, কৃষিতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক সিদ্দিকুর রহমান ওরফে কুল ময়েজ বলেন যারা সারা দেশের মানুষের জন্যি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাবার তৈরি করে, আমরা কৃষক আমাদের ছুটি নাই, সেই সব কৃষকদের মামলা থেকে অব্যহতি ও সমুদয় ঋণের টাকা পরিশোধ করে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল, যা পাবনা তথা সারা দেশের মানুষ, সারা জীবন মনে রাখবে। ইতিহাসে স্বর্ণক্ষওে লেখা খাকবে।
ভাড়ইমারী উত্তরপাড়া সবজি চাষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি বিলকিস নাহার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের জন্য আল্লাহর কাছে দীর্ঘ আয়ু কামনা করি ও আল্লাহ যেন স্যারকে সব সময় সুস্থ্য রাখেন।
উল্লেখ্য বহুল আলোচিত পাবনায় কৃষিঋণের মামলায় আটকের পর জামিনে মুক্ত পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ৩৭ প্রন্তিক কৃষককে ব্যাংকঋণ থেকে দায়মুক্ত করল শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড (ইডাব্লিউএমজিএল) কনফারেন্স রুমে শুভসংঘের আয়োজনে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড কর্তৃপক্ষকে সেই ঋণের ১৪ লক্ষাধিক টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে কালের কণ্ঠ'ও প্রধান সম্পাদক ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ পরিচালক ইমদাদুল হক মিলন বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক ঝর্ণা প্রভা দেবীর কাছে চেক হস্তান্তর করেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক (পরিদর্শন ও আইন) মো. আহসানুল গনি ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক (আইন) আমিনুল ইসলাম রাজীব প্রমূখ।
চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘২০১৬ সালে পাবনার ঈশ্বরদীর ৩৭ জন কৃষক ঋণ নিয়েছিলেন। একাধিকবার তাগিদ দেওয়ার পর সেটা পরিশোধ করতে পারেননি। নিশ্চয়ই সেই কৃষকদের নানান অসুবিধার কারণেই সেটা পারেননি। একপর্যায়ে ইন্টারেস্টসহ টাকাটা বড় অঙ্কে চলে এসেছে। এর মধ্যে মামলা হয়েছে, ১২ জন কৃষককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। সেটা যখন আমাদের কাগজে সংবাদ এলো। তার পরপরই আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে আইনি সহায়তা দিয়ে তাদের জামিনে মুক্ত করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় ৩৭ কৃষকের সেই ঋণের টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে।
চেক হস্তান্তরের সময় বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক ঝর্ণা প্রভা দেবী বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপকে প্রান্তিক পর্যায়ে ৩৭ কৃষকের ঋণ পরিশোধ করে তাদের নতুন জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। কৃষকদের জন্য তাদের এই সহায়তা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। যত দ্রুত সম্ভব সেই কৃষকদের মামলা প্রত্যাহার করা হবে। তাদের আর কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না।
ঝর্ণা প্রভা দেবী আরো বলেন, কৃষকদের মামলা ও গ্রেপ্তার বিষয়ে আমরা কেন্দ্র থেকে পুরোপুরি অবগত ছিলাম না।