সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার এখতিয়ার না থাকায় বরিশালের ৩১টি দপ্তরের অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি বকেয়া বিল আদায় করতে পারছে না ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) লিমিটেড।
বছরের পর বছর চিঠি চালাচালি আর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেও বকেয়া উত্তোলন করতে না পেরে চরম বিপাকে রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এ সংস্থাটি। তারপরেও ওজোপাডিকো’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রত্যাশা করছেন প্রতিষ্ঠানগুলো বকেয়া পরিশোধ করে সরকারকে সহায়তা করবে।
ওজোপাডিকো’র বিদ্যুৎ সঞ্চালন দপ্তরের দেয়া তথ্য জানা গেছে, বরিশালের ৩১টি দপ্তরের কাছে তাদের সর্বমোট ৫৩ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এরমধ্যে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কাছেই পাওনা রয়েছে প্রায় ৫১ কোটি টাকা। এ ছাড়া জেলা পুলিশের কাছে প্রায় ৮৪ লাখ, সার্কিট হাউজের কাছে ১২ লাখ, শিল্পকলা একাডেমির কাছে সাড়ে পাঁচ লাখ, সিভিল সার্জনের কাছে ছয় লাখ টাকাসহ মোট ৩০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে তিন কোটি ৭২ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে।
সচেতন নাগরিকদের মতে, সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে বকেয়া উত্তোলনে সরাসরি মামলা দায়ের করছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ প্রতিষ্ঠানের কাছে তাদের সবচেয়ে বেশি পাওনা থাকলেও টাকা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছেনা।
ওজোপাডিকোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণ গ্রাহকের কাছে সর্বসাকূল্যে তাদের দুই কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ওইসব পাওনা আদায়ে প্রায় দুই শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওজোপাডিকো’র পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল বরিশালের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এটিএম তারিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি বা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বকেয়া বিল উত্তোলন করতে মামলা দায়েরের বিধান নেই। তাই চিঠি দিয়ে বকেয়া পরিশোধের জন্য অবহিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সিটি কর্পোরেশনের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগ সবচেয়ে বেশি টাকা পাবে। যা উত্তোলন করতে মেয়র মহোদয়ের সাথে ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ওজোপাডিকোর প্রধান প্রকৌশলী সম্মিলিতভাবে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে পরবর্তী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৮৪ লাখ টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল থাকা প্রশ্নে জেলা পুলিশ সুপার মো. ওয়াহেদুল ইসলাম বিপিএম বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। বিল পরিশোধে আমাদের যদি কোনো ‘ল্যাবস অ্যান্ড গ্যাপস’ থাকে তাহলে সমন্বয় করে তা সমাধান করে নেয়া হবে। বরিশালের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. সব্যসাচি দাস বলেন, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল সর্ম্পকে আমার ধারণা নেই। সিভিল সার্জন স্যার হজ্ব করতে যাওয়ায় তাৎক্ষণিক কিছু বলতে পারছি না। তবে তিনি আসলে সার্বিক বিষয়ে জানাতে পারবো। সিভিল সার্জনের হিসাব রক্ষক জায়েদা আনোয়ার বলেন, গত সপ্তাহে সাত লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি ছয় লাখ টাকার বকেয়া পরিশোধে মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই বকেয়া পরিশোধ করা হবে।
বরিশাল শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মোহাম্মাদ হাসানুর রশীদ বলেন, চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা আছে। এরপরে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা বকেয়া হয়েছে। বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগ জানানোর পর আমরা কেন্দ্রীয় শিল্পকলায় আবেদন করেছি। বরাদ্দ আসলেই বকেয়া টাকা পরিশোধ করা হবে।
উল্লেখ্য, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে বারবার বকেয়া বিল পরিশোধের চিঠি দিয়েও বিল না পেয়ে চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর কয়েকটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ওজোপাডিকো। পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশন থেকে বিল পরিশোধের আশ্বাস দেয়ায় চারদিন পর বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। এ ছাড়া অন্যান্য দপ্তরকে বকেয়া পরিশোধের জন্য ওজোপাডিকো থেকে একাধিকার চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।