বছরের প্রথম দিন নতুন পাঠ্যবই হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী। তবে সঠিক সময়ের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী উপজেলা পর্যায়ে এখনও নতুন বই না পৌঁছায় কিছুটা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও কোন বইই হাতে পাননি।
এ অবস্থায় প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যথাসময়ে শিক্ষার্থীরা নতুন বই হাতে পাবেন। সেইসাথে যথাসময়েই উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীরা বই উৎসব উদ্যাপন করবে। কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, কোন কোন বিষয়ের বই পহেলা জানুয়ারিতে না পেলেও সর্বোচ্চ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই তা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ছয় জেলায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত ১১ লাখ ৯১ হাজার ৪৬ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। যারমধ্যে বরিশাল জেলায় ৩ লাখ ২৪ হাজার ৮৬৫ জন, পিরোজপুরে ১ লাখ ৪২ হাজার ২৩০ জন, ঝালকাঠিতে ৭৪ হাজার ১০১ জন, বরগুনায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৫ জন, পটুয়াখালীতে ২ লাখ ২৫ হাজার ১০৭ জন ও ভোলা জেলায় ২ লাখ ৯৫ হাজার ৬৮৮ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, এসব ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বরিশাল বিভাগে মোট বইয়ের সম্ভাব্য চাহিদা দেয়া হয়েছে ৪৯ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩১টি। এ ছাড়া ৮ হাজার ৮২৩টি ইংরেজি ভার্সনের বইয়ের চাহিদা রয়েছে। সবমিলিয়ে বরিশাল ও ভোলা জেলায় সবচেয়ে বেশি বইয়ের চাহিদা রয়েছে আর সবচেয়ে কম চাহিদা রয়েছে ঝালকাি জেলায়। তবে উপজেলা পর্যায়ে এখনও বিভিন্ন শ্রেণি কিংবা বিষয়ের বই চাহিদা অনুযায়ী এসে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। এমনকি এখনও বই না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশাল সদরের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকরা।
এ ব্যাপারে শুক্রবার সকালে মোবাইল ফোনে বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষার উপণ্ডপরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, কোন উদ্বেগের কারণ নেই, ইতোমধ্যে গোটা বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী ৫০ শতাংশের মতো বই এসেছে। বাকি বইগুলো পথে ও গাড়িতে রয়েছে। আশাকরছি পহেলা জানুয়ারীর আগেই প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানগণ তাদের চাহিদা অনুযায়ী বই পেয়ে যাবেন এবং সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যথাসময়ে বিদ্যালয়গুলো বই উৎসব পালন করবে। তবে কোন কোন বিষয়ের বই পেতে বিলম্ব হতে পারে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যে সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বই উৎসবের দিনে সকল বিষয়ের বই পাবে না, তারাও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সব বই হাতে পেয়ে যাবে।
অপরদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বরিশাল অঞ্চলের অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা স্তরের ২ হাজার ৭৫১টি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে বই সরবরাহ করা হবে। সেই হিসেবে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ৬ লাখ ৪০ হাজার ৫৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। যারমধ্যে বরিশাল জেলায় ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫০ জন, পিরোজপুরে ৭৪ হাজার ৭৮৪ জন, ঝালকাঠিতে ৫১ হাজার ১০ জন, বরগুনায় ৬৮ হাজার ৯৯১ জন, পটুয়াখালীতে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৪৫ ও ভোলা জেলায় ১ লাখ ৩৯ হাজার ১৭০ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। এসব ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মোট বইয়ের সম্ভাব্য চাহিদা দেয়া হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৫৩টি। এ ছাড়া দাখিল, এবতেদায়ী, এসএসসি ভোকেশনাল, দাখিল ভোকেশনাল ও কারিগরি ট্রেডে আরও ৬৮ লাখ পিস বইয়ের চাহিদা রয়েছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপণ্ডপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের আওতাধীন বেশিরভাগ বই সংশ্লিষ্টদের হাতে গিয়ে পৌঁছেছে। যে সকল বই বাকি রয়েছে তাও পথে গাড়িতে রয়েছে। কুয়াশাসহ বৈরি আবহাওয়ার কারণে বই পরিবহনে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে, তবে আমরা যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে তাদের নতুন বছরের উপহার পাঠ্যবই তুলে দিতে পারবো। তিনি আরও বলেন, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক বই উৎসবের আয়োজনও চলছে।