কুড়িগ্রাম পুলিশের ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ ‘লিটল ফ্রি লাইব্রেরি’ নামক ক্ষুদে লাইব্রেরি জেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন চরাঞ্চলের জ্ঞানপিপাসুদের জন্য লিটল ফ্রি লাইব্রেরি কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের একটি উদ্ভাবনী প্রয়াস।
ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমোরসহ ১৬ নদণ্ডনদী জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে পুরো জেলা জুড়ে। এসব নদণ্ডনদী অববাহিকায় প্রায় সাড়ে ৪শতাধিক চরাঞ্চলে প্রায় ৫ লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করে। এসব চরাঞ্চলে প্রায় ৫ লাখ মানুষ বসবাস করে। এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নুরানী মাদ্রাসা থাকলেও এসব চরাঞ্চলে স্কুল, কলেজসহ আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রায় নেই বললেই চলে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এখানকার মানুষকে উচ্চবিদ্যালয় পড়তে অন্যত্র যেতে হয়। কিন্তু এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে নানা কুসংস্কার চালু রয়েছে। বিশ্বায়নের এ কযুগে তাদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়াতে এসব নদণ্ডনদী অববাহিকার পাঁচটি পয়েন্টে প্রাথমিকভাবে চালু হয়েছে এই লিটল ফ্রি লাইব্রেরি। কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর চরের ঘাটে ১টি, উলিপুর উপজেলার নামাজের চরে ১টি, ব্রহ্মপূত্রনদ বেষ্টিত ঢুষমারা থানায় ১টি, চিলমারী উপজেলার রমনা ঘাটে ১টি ও রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জের প্রত্যন্ত চরে ১টিসহ মোট ৫টি লিটল ফ্রি লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে।
প্রত্যন্ত চরের বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের বই পড়ার অদম্য ইচ্ছে যাতে আরও সুপ্রশস্ত হয় সে লক্ষ্যে এ লাইব্রেরির কার্যক্রম চালু করেছে জেলা পুলিশ। চরাঞ্চলের বিভিন্ন চায়ের দোকান ও যেখানে মানুষের আড্ডা হয় সেসব দোকানে মধ্যে ’লিটল ফ্রি লাইব্রেরি’ স্থাপন করা হয়েছে। এসব লাইব্রেরি থেকে চর এলাকার বাসিন্দারা বই পড়ার পাশাপাশি বই বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পড়তে পারছেন। সংশ্লিষ্ট চা-পানের দোকানদার লিটল ফ্রি লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করছেন। বর্তমানে প্রতিদিন জ্ঞানার্জনের জন্য চরাঞ্চলের মানুষ চায়ের দোকান, নদীর ঘাটে ও আড্ডা স্থানে এ লিটল ফ্রি লাইব্রেরিতে বই পড়ছেন।
কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার আল আসাদ মোঃ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, লিটল ফ্রি লাইব্রেরি আমাদের ধারাবাহিক পুলিশিং কার্যক্রমের অংশ। এটি টেকসই নিরাপত্তা, সমাজে সহনশীল শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে সুদৃঢ় করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। লিটল ফ্রি লাইব্রেরিতে প্রাথমিকভাবে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু, সাত বীরশ্রেষ্ঠসহ ইতিহাস, সমাজ, জীবননির্ভর ও ভবিষ্যতমুখী বই স্থান পেয়েছে। ভবিষ্যতে এ লাইব্রেরির কলেবর আরও বাড়বে।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা চাই জেলার প্রত্যন্ত চরের নাগরিকরা বই পড়ে মুক্তিযুদ্ধ, অতুলনীয় নেতৃত্ব এবং ভবিষ্যতমুখী উন্নয়ন প্রচেষ্টা ও কার্যক্রম সম্পর্কে জানুক। তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত থাকুক। তাদের জ্ঞানের বিকাশ ঘটুক।