আমিনুল ইসলাম। বয়স ৪৫ বছর। ভুগছেন গল ব্লাডারে পাথর। অসয্য ব্যাথা নিয়ে ভর্তি আছেন সৈয়দপুর ১০০ শয্যা সরকারি হাসপাতালে। তীব্র ব্যথা কমাতে ৯ দিন ধরে সকাল ও রাতে সেফট্রিয়াক্সন (১ গ্রাম) ইনজেকশন নিতে হচ্ছে চিকিৎসকের পরামর্শে। যার একটি ইনজেকশনের মুল্য ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। যা দিন মজুর আমিনুল ইসলামের পক্ষে ক্রয় করা সম্ভব নয়। তিনি বিভিন্ন স্বজনদের কাছে হাত পেতে এ ইনজেকশন ক্রয় করে চিকিৎসা চালিয়ে গেলেও দুই দিন আগে সেই টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় আর কিনতে পারছেন না।
চিকিৎসকের পরামর্শে ডোজ পুর্ণ না হলে আবারও সমস্যা বাড়তে পারে। চিকিৎসকের এমন কথায় তার মাথায় হাত। তিনি সুস্থ্য হবেন কি না এমন দুর্ভাবনা ও দুঃশ্চিন্তায় হাসপাতালের বেডে নির্ঘুম রাত কাটছে তার। শুধু আমিনুল না। তার মত আরো অনেক রোগি চিকিৎসা নিতে আসেন এ হাসপাতালে। তারাও ভুগছেন পরীক্তিষা নিরীক্নিষা ও ওষুধ সমস্যায়। সরকারের দেয়া পরীক্ষার মেশিনপত্র প্রায় সময় থাকে অকেজো। দামী ওষুধগুলো দেয়া হয় না রেগিকে। তবে কোন কোন রোগিকে দেয়া হচ্ছে বিশেষ সুপারিশে। এমন অভিযোগ রোগির স্বজনদের।প্রতিদিন শত শত রোগি আসছে বিভিন্ন রোগ নিয়ে হাসপাতালে। চিকিৎসা সেবা নিতে এসে তারা পড়েছে ওষুধ সংকটে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ বলছেন চাহিদার সিকিভাগ ওষুধও বরাদ্দ মিলছে না। তবে কি কারণে ওষুধ মিলছে না বা বরাদ্দ আসছে না তার মুল কারণ জানানো হয়নি। হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ১৫ দিন ধরে এ সমস্যা চলে আসছে। আরও জানায়, সেফট্রিয়াক্সন (১ গ্রাম) ১০ হাজার ভয়াল দরকার। এর বিপরীতে মিলেছে মাত্র ৩ শত ভয়াল। ওমিপ্রাজল ও ইসোমিপ্রাজল মিলেছে ১০ হাজার ভায়ালের চাহিদার বিপরীতে ৪ হাজার, কলেরা স্যালাইন (১০০০ সিসি) ও (৫০০ সিসি) মিলে ১২ হাজার ব্যাগের বিপরীতে শুধু ১ হাজার ব্যাগ মিলেছে। ডিএনএস ও হার্টম্যান স্যালাইন ৯ হাজার ব্যাগ দরকার। সেখানে মিলেছে ৪শ ব্যাগ। পাশাপাশি সংক্রামক রোগের জন্য শিশুদের এন্টিবায়োটিক সিরাপ, সর্দি কাশির সিরাপ, এলার্জি রোধক সিরাপ ও বড়দের ট্যাললেট কিংবা ক্যাপসুল তেমন নেই। নেই স্যালাইন পুশ করার ক্যানুলা নামক উপকরণ।
পাশাপাশি অসক্রামক ব্যাধী উচ্চ রক্তচাপরোধী ওষুধ ছাড়া তেমন কোন কিছুই সরবরাহ নেই অন্ত ও বহির্বিভাগে। আর পাশাপাশি সরকারি কোন চিকিৎসা কেন্দ্র না থাকায় পার্শ্ববতি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, খানসামা, পার্বতীপুর, রংপুরের বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ এবং স্থানীয় রোগীরা আসেন এই হাসপাতালে। এতে প্রতিদিন বহির্বিভাগে প্রায় ৫শ ও অভ্যন্তরীণ বিভাগে দুই শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশ মানুষই অসচ্ছল। হাসপাতালে ওষুধ না পেয়ে তারা স্হানীয় ফার্মেসী থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে। আবার অনেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আবুল কাশেম (৫৬) নামে এক শিশু রোগীর অভিভাবক জানান, বর্তমান শৈত্য প্রবাহ চলছে। এতে ঠান্ডাজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। কিন্তু নিউমোনিয়ার ইনজেকশন পাওয়া যাচ্ছে না। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বিভিন্ন বয়সী রোগীরা শুধু ব্যবস্থাপত্র নিয়েই ফিরছেন।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডাঃ নাজমুল হুদা বলেন, চাহিদানুযায়ী ওষুধ বরাদ্দ মিলছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা রাখি দ্রুত সমস্যা কেটে যাবে।