গত ২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় চাঁদপুর শহরের পুরান বাজারে মাদক উদ্ধারের অভিযানে পুলিশের উপস্থিতির আতঙ্কে অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ ৩ জনকে আটক করেছে। আর এ ঘটনায় নিরাপত্তার স্বার্থে নারী ও শিশুসহ ৪ জন কে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ঘটনার সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার ২নং ওয়ার্ডের বউ বাজার এলাকায় স্থানীয় রেহানা বেগমের পরিবারের সাথে বিউটি বেগম পরিবারের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে দীর্ঘদিন যাবত। এই বিরোধকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য বিউটি বেগমের পরিবারকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর জন্য রেহানা বেগম তাঁর আপন ছোট বোনের জামাই আলমগীরের সহযোগিতায় ইয়াবা ট্যাবলেট সংগ্রহ করে। পরে আলমগীরের পরামর্শ মোতাবেক রেহানা বেগম কৌশলে বিউটি বেগমের ঘরে ইয়াবা ট্যাবলেট রেখে পুনরায় আলমগীরকে জানায়। আলমগীর পুরান বাজার পুলিশ ফাঁড়িকে মোবাইল ফোনে জানায় তাঁর বউয়ের বড় বোন পুলিশকে একটি বাসায় মাদক আছে এ মর্মে তথ্য দেওয়ার জন্য ফোন করবে। পুলিশ যেনো বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে, এজন্য অনুরোধ জানান। এরপর পরই রেহানা পুলিশকে ফোন করে বিউটি বেগমের ঘরের কোথায় কী অবস্থায় মাদক রয়েছে এটি বলে পুলিশকে মাদক উদ্ধারের বিষয়ে অনুরোধ করে।
এদিকে, পুলিশ রেহানার দেয়া তথ্যমতে ওই বাসায় গিয়ে রেহানার বর্ননা অনুযায়ী মাদক উদ্ধার করে। রেহানার বর্ননা অনুযায়ী মাদক উদ্ধার করার পর বিষয়টি পুলিশের সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় পুলিশ ঐ বাসায় অভিযান পরিচালনা কালে জানতে পারেন সেই বাসায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর প্রসব ব্যাথা উঠেছে। একথা শুনে পুলিশ তাৎক্ষণিক পুলিশের ব্যবহৃত একটি গাড়ি দিয়ে ঐ অন্তঃসত্ত্বা নারীকে চিকিৎসার জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
এর ফাঁকে পুলিশ কৌশল অবলম্বন করে মাদক উদ্ধার করার জন্য অনুরোধকারী সোর্স রেহানার বাসায় গিয়ে তাঁর এই তথ্য সত্যতার বিষয়ে রেহানার পরিবারের সাথে কথা বলে কিভাবে রেহানা এ মাদক ঐ বাসায় রয়েছে এটি জানার জন্য এবং প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে কাজ করার সময়ে খবর আসে অন্তঃসত্ত্বা নারী মৃত্যু বরণ করেছে। এই নারীর মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাবাসী পুলিশের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুরানবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ভিড় জমায়। পরে জেলা ও থানা পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
স্থানীয় একটি কুচক্রী মহল ঘটনাটি পুলিশের উপর দোষ চাপিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালায়। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সচেতন জনগণ ও পুলিশের তৎপরতায় একপর্যায়ে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে, ঘটনা নিয়ে যখন নানামুখী বিতর্ক চলছে এই অবস্থায় জেলা পুলিশের উধ্বতন কর্মকর্তাগণ দীর্ঘ সময় বৈঠক করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন ও ঘটনার নেপথ্যে নায়কদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে পুলিশ।
অপরদিকে, অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যুর ঘটনার পর পরই একটি মহলের ইন্দ্বনে পুলিশকে মাদকের তথ্য দেওয়া রেহানার বাড়িতে হামলার চেষ্টা চালায়। এখবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক রেহানার বাড়িতে গিয়ে রেহানার ছোট বোন শাহিনুর বেগম ও ৩ শিশু সন্তান কে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
অপরদিকে রাতে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ কে মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে ফোন করে প্রথম তথ্য দেওয়া রেহানার ছোট বোনের জামাই আলমগীর ও তাঁর ভাই জাহাঙ্গীরকে আটক করে।
এদিকে এ ঘটনার বিষয়ে পুলিশ বলছে, ঘটনা উদঘাটনে বা একটি বাসায় কোথায় কিভাবে কত পিছ মাদক রয়েছে এমন তথ্য পুলিশ কে দিয়ে পুলিশ কে বির্তকের মধ্যে পালানোর চেষ্টার বিষয় তদন্ত চলছে। তদন্তের পরে এ বিষয় কথা বলবেন। পুলিশ আরো জানায়, ঘটনার মুল নায়ক রেহানা কে আটকের বিষয় পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে শাহীনুর বেগম ও তাঁদের ৩ শিশু সন্তান পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহ ভাজন হিসেবে জাহাঙ্গীর ও আলমগীর দু'ভাই কে আটক করা হয়েছে। তবে ঘটনার বিষয় মামলা দায়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। অন্যদিকে নিহত অন্তঃসত্ত্বা নারী কে আজ ৩ জানুয়ারি সকালে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বলে নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।