বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল ফজল মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুসের মৃত্যুতে একই ইউপি চেয়ারম্যান দুইধরনের ওয়ারিশ সনদ প্রদানের ঘটনায় চরম বিপাকে পরেছেন মৃত মুক্তিযোদ্ধার দ্বিতীয় স্ত্রী অসহায় নাদিরা ইয়াসমিন। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের বোরাদী গরঙ্গল গ্রামের।
নাদিরা ইয়াসমিন জানান, ওই গ্রামের বাসিন্দা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সহকারী হিসাব নিয়ন্ত্রক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল ফজল মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুস তার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর ২০০১ সালে তাকে (নাদিরা ইয়াসমিন) রেজিষ্ট্রি কাবিনমূলে দ্বিতীয় বিয়ে করা হয়। বিয়ের পর তারা স্বামী-স্ত্রী ঢাকায় বসবাস করে আসছিলেন। ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। ১০ নভেম্বর তিনি নিজেই স্বামীর লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এসে দাফনের ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর আগপর্যন্ত আমিই তার সাথে ছিলাম। এমনকি আমি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি এবং মৃত্যুর পর সনদপত্রটিও উঠিয়েছি।
নিঃসন্তান নাদিরা ইয়াসমিন আরও বলেন, মৃত্যুর পর স্বামীর প্রথম স্ত্রীর সন্তান (সৎ ছেলে) মাসুম বিল্লাহ স্থানীয় নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদে ওয়ারিশ সনদের জন্য আবেদন করেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রদানকৃত ওয়ারিশ সনদে ওয়ারিশ হিসেবে আমার (নাদিরা ইয়াসমিন) নাম রয়েছে। পরবর্তীতে আমার স্বামীর বীমা দাবী পরিশোধ সংক্রান্ত বিলের জন্য বিএডিসির প্রধান প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করা হয়। ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ ওয়ারিশদের প্রত্যেকের নামে পৃথক চেক ইস্যু করা হয়। তাতে আমি ২০% হিসেবে টাকা উত্তোলন করেছি। তিনি বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর আগে পেনশনের টাকা উত্তোলনের জন্য তার প্রথম স্ত্রীর চার সন্তান ও আমার নামে ২০% হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করে গেছেন। সে অনুযায়ী স্বামীর মৃত্যুর পরেও আমি তার মুক্তিযোদ্ধার সম্মানীর টাকা সোনালী ব্যাংক গৌরনদী শাখা থেকে উত্তোলন করেছি। পরবর্তীতে পেনশনের টাকা উত্তোলনের জন্য আমি পৃথকভাবে আবেদন করি। এরপরই পেনশনের টাকা, মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতার টাকা ও সম্পত্তি থেকে আমাকে বঞ্চিত করার জন্য আমার সৎ সন্তানরা নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় আমার স্বামী আমাকে তালাক দিয়েছে বলে অতিসম্প্রতি একটি মিথ্যে নাটক সাজিয়েছে আমার সৎ সন্তানরা। পরবর্তীতে এ নাটকীয় তালাকের বিরুদ্ধে আমি আদালতে মামলা দায়ের করি। তিনি বলেন, শুধুমাত্র আমাকে সম্পত্তি, পেনশন ও মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা থেকে বঞ্চিত করার জন্য আমার সৎ সন্তানরা ভূয়া তালাকনামা এবং নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে রহস্যজনকভাবে দ্বিতীয়বার আমার নাম বাদ দিয়ে নতুন করে ওয়ারিশ সনদপত্র উঠিয়ে আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করে। সেখানে আমি রিটের সঠিক জবাব দিয়েছি। এখন পর্যন্ত রিটের নিস্পত্তি না হলেও নানান কৌশলে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। অসহায় বিধবা নাদিরা ইয়াসমিন সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তার সৎ সন্তানদের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।