চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে রোগীর স্বামীর হামলা কবিরাজ আহত হয়েছে। পৌরসভার ভান্ডারী মহল এলাকায় (৫ জানুয়ারী) বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। হামলার ঘটনায় অভিযুক্তকে আটক করেছে থানা পুলিশ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা জুড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, ভোলা জেলাধীন ভোরহান উদ্দিন উপজেলার দক্ষিণ ভাটামারা গ্রামের মৃত কারী মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মাওলানা কারী মাহবুবুর রহমান (৬০) ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে চাকরীরত ছিলেন। গত মাসখানেক পূর্বে তিনি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। চাকুরী করার পাশাপাশি মাদ্রাসার পাশে ভান্ডারী মহল এলাকায় একটি ভাড়া বাসাতে থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ মানুষকে কবিরাজি চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। প্রতিদিনের ন্যায় বৃহস্পতিবার রাত ৮টার সময় অন্য এক রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন তিনি। রোগী সেজে আসেন রুবেল হোসেন। এ সময় তর্ক-বিতর্কের জেরে রুবেল হোসেন কবিরাজের ওপর কাটের টুকরো দিয়ে হামলা করে। চিৎকারে শোনে প্রতিবেশীরা এসে কবিরাজকে আহতবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ে অভিযুক্ত রুবেল হোসেনকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়।
সরেজমিনে জানা যায়, অভিযুক্ত যুবক রুবেল হোসেন (৩২) ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১০নং গোবিন্দপুর (দ.) ইউনিয়নের পশ্চিম লাড়-য়া গ্রামের মনু ভূঁইয়ার ছেলে। ব্যক্তি জীবনে তিনি ২ সন্তানের জনক ও কাতার প্রবাসে থাকেন। গত কয়েকদিন পূর্বে তিনি দেশে এসে দেখেন তার স্ত্রী রুবিনা আক্তার বসতবাড়ী নির্মাণ কাজে ত্রুটি করেছেন, এতে তিনি অভিমান করে আলাদা রুমে ঘুমিয়েছেন। এতে স্ত্রী রুবিনা আক্তার মাওলানা মাহবুবুর রহমান নামে কবিরাজের শরণাপন্ন হয়েছেন। রুবিনার কথা শোনে তার স্বামীর শারীরিক অক্ষমতা রয়েছে বলে জানিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন কবিরাজ। চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে গিয়ে রুবেল হোসেন’র স্ত্রী বাড়ির এক ভাবির কাছে রুবেলের শারীরিক অক্ষমতার বিষয়টি জানায়। এতে রুবেল হোসেন লজ্জিত হয়ে কবিরাজকে জিজ্ঞাসা করতে আসলে তাদের কর্ত-বির্তক বাধে। রুবেল নিজেকে পরিপূর্ণ সুস্থ্যদাবী করে একপর্যায়ে কবিরাজের ওপর হামলা করে।
আহত কবিরাজ মাওলানা মাহবুবুর রহমান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি বাসায় রোগী দেখতে ছিলাম। এমন সময় ওই যুবক এসে আমাকে বাহিরে গিয়ে একটি রোগী দেখার আমন্ত্রণ করলে আমি বারণ করি। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ওপর হামলা করে, ওই যুবক আমার পরিচিত নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই যুবকের নাম ঠিকানা আমার ডায়েরীতে লেখা আছে।
অভিযুক্ত রুবেল বলেন, আমি প্রবাস থেকে দেশে আসছি গত ২০দিন পূর্বে। এসে দেখি আমার স্ত্রী আমার নির্দেশনা মোতাবেক বাড়ির কাজটি করেন নি। এতে তার উপর অভিমান করে আলাদা বিচানায় ঘুমিয়েছি। আমি শারীরিক অসুস্থ হলে আমার দু’সন্তান এল কিভাবে। কি লজ্জা জনক বিষয়। কবিরাজ কিভাবে জানলো আমি শারীরিকভাবে অক্ষম, মূলত টাকার নেশায় করিরাজরা চিকিৎসার নামে এইসব ভন্ডামী করে।
এদিকে হামলার শিকার কবিরাজ মাওলানা মাহবুবুর রহমান মজিদিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হওয়ায় ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড.একেএম মাহবুবুর রহমানসহ নবীন-প্রবীর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ওই ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করে বিচারেরদাবী জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মান্নান বলেন, এ ঘটনায় রুবেল নামে এক যুবক পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। অভিযোগের আলোকে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।