একদিনের ব্যবধানে শৈত্য প্রবাহ আরও বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমানে যা বয়ে যাচ্ছে ১২টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে। এ ছাড়া তাপমাত্রা আরও কমে শীতের তীব্রতাও বেড়েছে। শনিবার এক পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে যার, বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। রোববার সকাল পর্যন্ত আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এ ছাড়া মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও বরিশাল জেলাসহ রাজশাহী বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু এলাকায় প্রশমিত হতে পারে। সারাদেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে সারাদেশে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে। ঢাকায় উত্তর/ উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার। আগামী তিন দিনের শেষের দিকে তাপমাত্রা কমতে পারে। শনিবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় টানা দুদিন মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। নেই সূর্যের দেখা। ঘন কুয়াশার পাশাপাশি বইছে হিমেল বাতাসও। কনকনে শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, শনিবার সকাল ৯টায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। গত শুক্রবার ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ হিসেবে শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রি কমেছে শনিবারের তাপমাত্রা। তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। এদিকে উষ্ণতার খোঁজে এলাকার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে ভিড় করছেন মানুষ। অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না। এদিকে শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশুওয়ার্ডসহ অন্য ওয়ার্ডে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। আর প্রতিদিন ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হচ্ছে শতাধিকের মতো। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, তীব্র শীতে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালের আউটডোরে প্রচুর রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন ৩-৪০০ শিশুকে আউটডোরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখন নিউমোনিয়া রোগী সংখ্যাও বাড়ছে। এ ছাড়া অন্য রোগীও আমাদের দেখতে হচ্ছে। যার কারণে হিমশিম অবস্থা।
অন্যদিকে উত্তরের হিমেল হাওয়া জবুথবু কুড়িগ্রাম। দিন যতই যাচ্ছে তাপমাত্রা ততই কমছে। এতে ব্যাহত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। বিশেষ করে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে। শনিবার সকাল ৬টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের আরমান বলেন, এত ঠান্ডায় মানুষ তো বিছানা থেকে উঠে নাই। আর আমরা কাজের জন্য মাঠে যাচ্ছি। এ ঠান্ডায় কাজ করতে একদমই মন চায় না। আরেক কৃষক আবদুল হামিদ বলেন, শীত ঘন কুয়াশায় রোপা আমন বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এভাবে শীত পড়লে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। গৃহবধূ শাহেরা খাতুন মিনা বলেন, ঠান্ডায় কাজ তো দূরের কথা বাইর হওয়া যাচ্ছে না। বাচ্চাদের নিয়ে সমস্যায় পড়েছি। বাধ্য হয়ে খুড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছি। কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তুহিন মিয়া বলেন, রেকর্ড হওয়া সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মৃদু শৈত্য প্রবাহের এখনো নিচে আছে। এ মাসে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। এ ছাড়া মাসে দু-তিনটি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবদুল গফুর বলেন, আমার ইউনিয়নটি নদী বেষ্টিত চরাঞ্চল। শীতে এখানকার মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে থাকে। এখানে কম করে হলেও ৫-৬ হাজার দুঃস্থ ও অসহায় মানুষ আছে। এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে ৭০০ কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বিতরণও করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই সরকার বলেন, জেলায় এ পর্যন্ত ৩৮ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা বিতরণের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ ছাড়া সরকারি বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে দুস্থদের শীতবস্ত্র বিতরণ চলছে।