প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার সর্বদা জনগণের দুঃখ-কষ্টে পাশে থাকবে। তিনি বলেন, জনগণের সেবাই আওয়ামী লীগের একমাত্র মূলমন্ত্র।
তিনি বলেন, আমরা সর্বদা জনগণের পাশে আছি এবং জনগণের সেবা করাই আমাদের মূলমন্ত্র। দেশবাসীকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে যা যা প্রয়োজন আওয়ামী লীগ সরকার সবই করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু আওয়ামী লীগ সরকারই নয়, এর নেতাকর্মীরাও জনগণের প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, করোনা ও যেকোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের জনগণের পাশে দাঁড়ানো থেকে প্রমাণিত হয় যে, দল সর্বদা জনগণের প্রতিটি দুঃখ-কষ্টে পাশে থাকে।
শনিবার দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম যৌথসভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভার কার্যক্রম শুরুর আগে শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয়। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার এখনো দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির কলেবর বাড়িয়েছে। অতি উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে কিনতে হলেও ভর্তুকি দিয়ে নিত্যপণ্য মানুষের মাঝে সরবরাহ করছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামরির পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আরও ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছে। আজকে উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে। নিজেদের তারা অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশ এখনো সেই পর্যায়ে যায়নি। শেখ হাসিনা বলেন, মাত্র ১৫ টাকায় চাল ক্রয়, মধ্যবিত্তের জন্য টিসিবির বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে চাল কেনার সুবিধা, ভিজিডি-ভিজিএফের মাধ্যমে একেবারে হতদরিদ্রদের খাদ্য সাহায্য দেওয়া, বয়স্ক ভাতা, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্ততা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতাসহ নানা ধরনের ভাতা বর্ধিত হারে দেওয়া হচ্ছে। যাতে মানুষের কোনো কষ্ট না হয়। দেশের সব অনাবাদী জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, অনেক দেশে আজকে খাদ্যের জন্য হাহাকার। কিন্তু আমরা এ মাটিকে যথাযথ ব্যবহার করতে পারলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অন্যকেও সাহায্য করতে পারবো। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের এ দেশের মানুষকে যেমনি স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, তেমনি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও করেছে। মাত্র ১৪ বছরে বাংলাদেশ আজকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে। এ জাতিকে একটি আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন জাঁতি হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরাই গড়ে তুলেছি। সেইসঙ্গে আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নিয়েছি। আমরা যেমন হাইটেক পার্ক করছি, স্কুলগুলোতে কম্পিউটার ল্যাব করছি, প্রযুক্তি শিক্ষা এবং বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যা করণীয় সেটা আওয়ামী লীগ যতদিন সরকারে আছে, মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য যা যা করণীয় তা করে যাবে। সেটা আমরা করে যাচ্ছি। গত তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করতে এসে প্রতি নির্বাচনেই আওয়ামী লীঘ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। মানুষের সেবা করার সুযোগ পেয়েছে। আর সেজন্য আজকে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেওয়ার সাফল্যের কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, প্রতিটি ঘরে আলো জে¦লে প্রতি ঘরকে আমরা আলোকিত করেছি। পাশাপাশি সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত করেছি। মানুষের আয়ুস্কাল ৬৪ থেকে ৭৩ বছরে উন্নীত, খাদ্যের সঙ্গে পুষ্টি নিরাপত্তাও নিশ্চিত, মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। দেশের ১৮ হাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়াসহ চিকিৎসা সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তরুণ প্রজন্ম যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেজন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জমানতে ঋণ প্রদান, বর্গাচাষীদের বিনা জমানতে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে ভতুর্কির টাকা সরাসরি পাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় দুই কোটি কৃষককে কৃষি উপকরণ ক্রয় করার জন্য কার্ড দেওয়া হয়েছে। আড়াই কোটি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দিয়ে সহযোগিতা করছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ, শীতে কম্বল ও গরম কাপড় বিতরণ করার মাধ্যমে সরকারের যতটুকু সাধ্য তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। বিত্তবানদেরও জনগণের দুঃখ-কষ্টে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে। আগুন সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, বিএনপি-জামায়াত আগুন দিয়ে আবারও মানুষ পোড়াতে চাইলে তাদের হাত আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হবে। কেউ দেশের ক্ষতি করতে চাইলে জনগণই তার উপযুক্ত জবাব দেবে। বিএনপির উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, তারা নির্বাচন চায় না। ভিন্ন পথে ক্ষমতায় আসতে চায়। বিএনপি-জামায়াত মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। জিয়াউর রহমান গুম-খুনের রাজনীতি শুরু করেছিল। সে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে তার স্ত্রী এবং ছেলে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই জনগণের পাশে আছে। কারণ, এটি আওয়ামী লীগের নীতি। দেশবাসীকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে যা যা প্রয়োজন আওয়ামী লীগ সরকার সবই করে যাচ্ছে। শুধু সরকার নয়, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবে আওয়ামী লীগও। স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট জনশক্তি গড়ে তোলাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। আওয়ামী লীগের সভাপতি আরও বলেন, করোনাভাইরাস ও যেকোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের জনগণের পাশে দাঁড়ানো থেকে প্রমাণিত হয়, দল সর্বদা জনগণের প্রতিটি দুঃখ-কষ্টে পাশে থাকে। এ সময় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনি প্রতিটি অনাবাদি জমিতে শস্য ফলানোর আহবান জানান। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কার মধ্যেও দেশের অর্থনীতি সচল আছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। যৌথসভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আমীর হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহাম্মদ ফারুক খান, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, ক্রীড়া সম্পাদক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা, সহ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ নবনির্বাচিত জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। যৌথসভা শুরুর আগে গোপালগঞ্জের ২৭ টি উন্নয়ন প্রকল্প এবং একটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টুঙ্গিপাড়া থেকে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে নবনির্বাচিত কমিটির নতুন পথচলা ও সাংগঠনিক প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হলো। এর আগে দুপুর ১২টায় নবগঠিত কমিটি নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান তার কন্যা শেখ হাসিনা। তার আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা জানান তিনি।