রাজশাহী পুঠিয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং রাজনৈতিক নেতাদের কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তিন ফসলী জমিতে পুকুর খননের হিরিক পড়েছে। এই ভাবে পুকুর খনন চলতে থাকলে,আগামীতে ফসল উৎপাদনের জমি একেবারেই কমে যাবে এবং বর্ষা মৌসুমগুলোতে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক জ¦লাব্ধতা দেখা দেবে।
জানা গেছে, এই ্এলাকায় আস্তে আস্তে তিন ফসলীর জমির পরিমাণ দিনদিন কমে যাচ্ছে। তাই একটি পরিবেশবাদী সংগঠন হাই কোর্টের একটি বেঞ্জ পুঠিয়া উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলায় ফসলী জমিতে পুকুর খনন না করার জন্য সংশ্ল্ষ্টি প্রশাসনের ওপর একটি রুল জারি করে ছিলেন। তারপর এই উপজেলায় খননকৃত পুকুরের মাটি বহণকারী ট্যাক্টরগুলো কোটি কোটি টাকা মূল্যের গ্রামীণ সড়কগুলো ধ্বংশ করে ফেলছে। এখানে দেখার কেউ নেই। স্থানীয়রা বলছেন, এবছর পুকুর খনন করতে জমির মালিকরা ক্ষমতাসিন দলের সাবেক একজন আ'লীগ ও ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে চুক্তি করেছে। আর ওই দুই নেতা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় পুকুর খননের কাজ করাচ্ছেন। স্থানীয়দের ভাষ্য, কয়েকদিন ধরে উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নের গাইনপাড়ায়, একই স্থানে ৬টি এবং কার্তিকপাড়ার পশ্চিম বিলে পুঠিয়া-দুর্গাপুর উপজেলা সীমান্তে দুটি পুকুর খননের কাজ চলছে। আর পুকুরগুলো খনন করছেন ফারুক হোসেন নামের একজন পুকুর খননকারী ঠিকাদার। পুকুরের মাটিগুলো ইটের ভাঁটা কিংবা নীচুস্থান পুরোন করার জন্য এলাকার মানুষরা অনেক টাকার বিনিময়ে কিনে নিচ্ছেন। জিউপাড়া এলাকার চাষি মুনতাজ উদ্দীন বলেন,কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি গাইনপাড়ায় গ্রামে একই স্থানে প্রায় ৮০ বিঘার তিন ফসলি জমিতে ৬টি পুকুর খনন করছে। আর পুকুর খননের মাটিগুলো ১২/১৪টি ট্যাক্ট্রর বহণ করছে। আর ট্র্যাক্টরগুলো মাত্রাতিরিক্ত মাটি বহণের কারণে, কোটি কোটি টাকা মূল্যের গ্রামীণ সড়কগুলো ভেঙেচুড়ে নষ্ট হচ্ছে। আমরা পুকুর খনন বন্ধ করার জন্য উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। স্থানীয় লোকজন বলছে, ৩ জানুয়ারী থানায় জানিয়ে ছিলাম। পরে কয়েকজন পুলিশ গিয়ে খননকারী ঠিকাদারকে ধরে নিয়ে এসে ছিল। কিন্তু পথে সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিবুর রহমান মিঠু পুঠিয়া শ্রমিক ইউনিয়নের সামনে পুলিশের সঙ্গে চুক্তি করে ওই ঠিকাদারকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে। এরপর প্রতিরাতে পুকুর খননের কাজ চলছে। পুকুর খননকারী ঠিকাদার ফারুক হোসেন বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে প্রতিটি পুকুর খনন করা হচ্ছে। আর যারা চুক্তিতে যায় না, তাদের জেল-জরিমানা করা হয়ে থাকে। উপজেলার যেভাবে পুকুর খননের হিরিক পড়েছে। তাতে করে তিন ফসলী জমি আগামীতে আর থাকবে না। তারপর বর্ষা মৌসুমগুলোতে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক জ¦লাব্ধতা দেখা দেবে। এ বিষয়ে সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিবুর রহমান মিঠু বলেন, আমি কোনো পুকুর খননের সঙ্গে জড়িত নেই। শুনেছি একটি স্থানে পুরনো পুকুর নাকি খনন হচ্ছে। সাবেক রাজশাহী জেলা আ'লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদ বলেন, শুনেছি ফারুক নামের পুকুর খনন করা ব্যবসায়ী খননের কাজ করছে। কেউ আমার ব্যবহার করে মিথ্যাচার প্রচারণা করছে। আমি পুকুর খনন করা বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে বিশেষ সসমঝোতার বিষয়টি অস্বীকার করে থানার ওসি সোহরাওয়াদী হোসেন বলেন, গত দুইদিন আগে পুলিশ একটি পুকুর খনন বন্ধ করতে গিয়েছিল। পরে তাদের খননের অনুমোদন থাকায় ফিরে এসেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাস্মদ আনাছ বলেন, পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছেন। যেখানে ফসলি জমিতে পুকুর খনন হবে,সেখানেই জেল জরিমানা দেওয়া হচ্ছে।