কৃষিমন্ত্রী ডঃ আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রতিবছর বিদেশ থেকে ভোজ্য তেল আমদানি করতে সরকারের ব্যয় হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এদেশের মানুষ আগে সরিষার তেল খেত। কেউ পাম তেলও চিনত না। কেউ সয়াবিন তেল চিনত না। দেশের সরিষা দিয়েই তেলের চাহিদা মিটতো। কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, বিদেশ থেকে যদি তেল আমদানি করা না লাগতো, তাহলে ওই টাকা দিয়ে দেশের অনেক উন্নয়ন করা যেতো। কিন্তু আমাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয় তেল আমদানির জন্য।
আমাদের বিজ্ঞানীরা সরিষার নতুন যা আবিষ্কার করেছে। সেই জাতগুলো হলো বারি-১৪, বারি-১৮ এবং বিনা-৯। এই জাতগুলো চাষ করে কৃষক বিঘাপ্রতি ৬ থেকে ৭ মণ ফলন পাঁচ্ছে। আগে যে সরিষার চাষ হতো তার ফলন এক থেকে দেড় মণের বেশি না। সরিষা ছাড়াও আমাদের বিজ্ঞানীরা ধানের নতুন জাত আবিষ্কার করেছে। এই ধান রোপন করতে হয় শ্রাবণ ভাদ্র মাসে। নতুন এই ধানের জীবনকাল ১১০ থেকে ১১৫ দিন। সরিষা চাষ করতে সময় লাগে ৮০ দিন। এই ৮০ দিনে বোরোর আবাদও কম হবে না আবার আমনের আবাদও কম হবে না। আমন ও বোরোর মাঝামাঝি সরিষা একটি অতিরিক্ত ফসল। অতিরিক্ত মুনাফা। সরিষা চাষ করে একজন চাষী বিঘা প্রতি চল্লিশ থেকে ৪৫ হাজার টাকা মুনাফা পেতে পারে।
রোববার (৮ জানুয়ারি) বেলা দেড়টার দিকে সাতক্ষীরার উপজেলার হেলাতলা মৌজার সরিষা মাঠে স্থানীয় মৌ-চাষী কবিরুল ইসলামের ফার্ম পরিদর্শন শেষে এক কৃষক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। কৃষিমন্ত্রী ডঃ আবদুর রাজ্জাক সরিষা চাষের এই সম্ভাবনাকে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা আগামী বছরের মধ্যে ভোজ্য তেল বাবদ আমদানি ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে দশ হাজার কোটিতে আনবো। এজন্য আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। সরিষা আবাদ করে আমরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ বিদেশি নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনবো। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি। এটা আমরা বাস্তবায়ন করছি।
কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ও অনুশাসনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
আমরা কৃষকদের ব্যাপকভাবে প্রণোদনা দিচ্ছি। আমরা কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যের সার দিচ্ছি, বীজ দিচ্ছি ও কৃষি উপকরণ দিচ্ছি। কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরিষা চাষের মাধ্যমে তেল উৎপাদনে আমরা বিপ্লব ঘটাবো। সরকারের নানামুখী উন্নয়নের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, করোনা কালীন পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা দেশের ধান উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি, সরিষার আবাদ বৃদ্ধি করেছি এবং সবজির আবাদ বৃদ্ধি করেছি। সরিষা মাঠের সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, সরিষার মাঠ দেখলে মনে হয় আদিগন্ত হলুদ রঙের চাদর বিছানো। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। হলুদ রঙা মাঠে সিনেমার শুটিং করতে মন চায়। বাংলাদেশের কৃষকরা যাতে উন্নত জীবন পায় সেজন্য বর্তমান সরকার সকল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। আমরা তেল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হব। এ দেশকে আমরা ফলে ফুলে ভরে তুলবো।
কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, জামাতের অনেক সমর্থক থাকতে পারে কিন্তু এই সমর্থক দিয়ে আন্দোলন করা অনেক কঠিন। আন্দোলন করতে হলে জনগণ লাগে। জনগণ ছাড়া আন্দোলন হয় না। আওয়ামী লীগ জনগণের দল। আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত দল। কেউ আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবেনা। নৈরাজ্য-নাশকতা সৃষ্টি করে সরকারের পতন ঘটানো যায় না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপণ্ডপরিচালক ড.জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.সজিব হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আরিফ আদনান, কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু, জেলা আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু সৈনিকলীগের নেতা সরদার মুজিব, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস, পৌর মেয়র মাস্টার মনিরুজ্জামান বুলবুল, কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাসির উদ্দীন মৃধা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন, সহ-সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান সম মোরশেদ আলী, সাধারণ সম্পাদক আলিমুর রহমান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সভাপতি কাজী আসাদুজ্জামান শাহাজাদা, আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল আলম মল্লিক রবি, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজিজুর রহমান, জেলা পরিষদ সদস্য আলহাজ্ব শেখ আমজাদ হোসেন, সদস্যা মাহফুজা রুবি, ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মফে,
ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান বেনজির হোসেন হেলাল, ইউপি চেয়ারম্যান ডালিম হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন হাবিল, পৌর কাউন্সিলর সফিউল আলম সফি, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আবুল হোসেন মিয়া, উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা জিয়াউল হক প্রমুখ।