চিরিরবন্দরে এক প্রসূতির সিজারের পর পেটে হাত মোছার তোয়ালা বা মাব রেখে দেয়া ও ভূল চিকিৎসা, রানীরবন্দর পলিটেক ক্লিনিকের নিবন্ধন না থাকায় নাম বদলে ‘রানীরবন্দর ক্লিনিক’ নামে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি এবং নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে রাণীরবন্দর পলিটেক ক্লিনিকটি চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে।
জানা গেছে, খানসামা উপজেলার মারগাঁও গ্রামের সেলিম মিয়ার স্ত্রী মুক্তা বেগমের প্রসব ব্যাথা উঠলে তাকে রাণীরবন্দর ক্লিনিকে গত ৩০ নভেম্বর ভর্তি করা হয় এবং ওই রাতেই দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট মোঃ রবিউল আলম এর মাধ্যমে ওই প্রসূতির অস্ত্রপাচার করা হয়। একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন মুক্তা বেগম। ৭ দিন ক্লিনিকে থাকার পর ছাড়পত্র নিয়ে বাড়িতে ফেরার পর হতে পেটে ব্যাথা অনুভব করতে থাকলে ওই প্রসূতিকে ফের ওই হাসপাতালে ভর্তির পর আল্ট্রাসনোগ্রাম করে চিকিৎসক দেখেন পেটে কিছু একটা আছে। গত ২৩ ডিসেম্বর পেটের তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পরদিন অস্ত্রোপচার করে তাঁর পেট থেকে (সিজারের অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকের হাত মোছার কাজে ব্যবহৃত কাপড়) তোয়ালে অপসারণ করা হয়।
এ ব্যাপারে রানীরবন্দর পলিটেক ক্লিনিক অ্যান্ড হাসপাতালের অভিযোগের বিষয়ে মোঃ রবিউল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ভুক্তভোগী মুক্তা বেগম বলেন, গত ৩০ নভেম্বর রানীরবন্দর পলিটেক ক্লিনিকে আমার সিজার হয়। কয়েক দিন পর পেটের যন্ত্রণা শুরু হলে ক্লিনিকে যোগাযোগ করলে তাঁরা ওষুধ লিখে দেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। পরে দিনাজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হই। সেখানে আবার অপারেশন হয়। ডাক্তার পেটের ভেতর থেকে কাপড় বের করেছেন।
দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মুক্তা বেগমের পেট থেকে তোয়ালে অপসারণ করেছেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট শফিকুর রহমান। তিনি বলেন-অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকেরা হাত মোছার কাজে ছোট আকৃতির তোয়ালে ব্যবহার করেন। চিকিৎসাবিদ্যার ভাষায় বলা হয় ‘মাব’। অস্ত্রোপচারের সময় মাবগুলো গুনে নেন নার্সরা। অসাবধানবশত হয়তো সেলাই করার সময় পেটের ভেতর একটি মাব ছিল। আল্ট্রাসনোগ্রাম করে পেটে ময়লার মতো কিছু একটা দেখতে পাওয়া যায়। পরে অস্ত্রোপচার করে সেটি অপসারণ করা হয়। বর্তমানে ওই প্রসূতি শঙ্কামুক্ত।
রানীরবন্দর ক্লিনিকটি বর্তমানে পরিচালনা করছেন রেজা ইসলাম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। ক্লিনিকের নিবন্ধনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পলিটেক ক্লিনিকের অনুমোদন নেই। পরে নাম পরিবর্তন করে ‘রানীরবন্দর ক্লিনিক’ নামে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।’
দিনাজপুর সিভিল সার্জন এএইচএম বোরহানুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘রানীরবন্দরের ওই ক্লিনিকের ঘটনায় তিনি ভুক্তভোগীদের অভিযোগ করতে বলেছেন। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। রানীরবন্দর পলিটেক ক্লিনিকের নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে রানীরবন্দর ক্লিনিক নামে নতুন করে নিবন্ধন নিয়ে তাঁরা আবার কার্যক্রম শুরু করেছেন। ওই প্রসূতি মায়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিগগিরই অনুমোদনহীন ক্লিনিকগুলোতে চেকলিষ্ট ধরে অভিযান চালানো হবে। এরই অংশ হিসেবে চিরিরবন্দর উপজেলা প্রশাসন ভ্যাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন।