স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সরকার দেশে অনেক উন্নয়ন করছে। কিন্তু বিরোধী দলগুলো সেই উন্নয়ন চোখে দেখে না। তাদের কমিউনিটি ভিশন সেন্টার অথবা চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে এনে চক্ষু পরীক্ষা করে ছানি দূর করতে পারলে তখন সব উন্নয়ন দেখবে। বুধবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে এসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে আরও ৭০টি উপজেলায় এ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় মানুষের চক্ষু চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিউনিটি ভিশন সেন্টার কোনো বিকল্প নেই। এ কমিউনিটি ভিশন সেন্টার প্রতিষ্ঠায় ডিজিটাল প্রযুক্তি সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, আজ দেশের ৪৫ উপজেলায় কমিউনিটি ভিশন সেন্টার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে ৭টি বিভাগের ৩৯টি জেলার ১৩৫টি উপজেলায় সমন্বিত চক্ষু চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু হয়েছে। আর নতুন এ কমিউনিটি ভিশন সেন্টার স্থাপনের ফলে দেশের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ বা ৫ কোটি মানুষ উন্নত চক্ষু সেবার আওতায় আসবে। আমরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মানের দিকে আরও বেশি যত্নবান হয়েছি জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ৪টি কমিটি তৈরি করেছি এবং এর মাধ্যমে সারাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তদারকি করা হচ্ছে। আমরা প্রতিটি হাসপাতালে জনগণের উপস্থিতি, সব যন্ত্রপাতি সচল রাখাসহ স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের বিষয় গুলো ভালোভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রশিক্ষিত জনবলের কিছুটা অভাব রয়েছে। তা পূরণেও জনবলের নতুন অবকাঠামো গঠনের জন্য জনপ্রশাসনে রয়েছে। চক্ষুরোগসহ অসংক্রামক রোগ বৃদ্ধি পাঁচ্ছে বাংলাদেশে। সেজন্য উন্নত চিকিৎসা ও হাসপাতাল নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। জাহিদ মালেক বলেন, চক্ষু রোগসহ অসংক্রামক রোগ দেশে বাড়ছে। এ রোগগুলোর মাধ্যমে ৬৭ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বাড়ছে, এর যত্রতত্র ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে একটি আইন প্রণয়ন হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আই কেয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে চক্ষু চিকিৎসার নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়। বর্তমানে দেশে অন্ধত্বের হার এক শতাংশ। যা ২০ বছর আগের জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ কম। চোখের ছানিজনিত অন্ধত্ব যা আগে ১১ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৫ লাখ ১৭ হাজার। বর্তমানে ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ছানি রোগী রয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার। মন্ত্রী বলেন, পঞ্চাশোর্ধ্ব জনগণের মধ্যে ভারতে অন্ধত্বের হার পৌণে দুই শতাংশ। নেপালে আড়াই শতাংশ, সেখানে আমাদের দেশে দেড় শতাংশ। ত্রিশোর্ধ্ব জনগণের মধ্যে পাকিস্তানে অন্ধত্বের হার পৌনে তিন শতাংশ, সেখানে আমাদের দেশে শূন্য দশমিক সাত শতাংশ। তিনি আরও বলেন, ন্যাশনাল আই কেয়ার অপারেশনাল প্লানের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, যেমন জেলা সদর হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চক্ষু সেবার মানোন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করে যাচ্ছি। প্রতি বছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল আই কেয়ার অপারেশনাল প্লানের মাধ্যমে বিনামূল্যে আড়াই লাখের অধিক ছানি রোগীকে লেন্স সংযোজন করে স্বাভাবিক দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি খাতে প্রতিটি লেন্স লাগাতে আনুমানিক ৫০ হাজার টাকা নিয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলের মানুষের চক্ষু সেবা কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের কোনো বিকল্প নেই। এ কমিউনিটি ভিশন সেন্টার প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ ডিজিটাল প্রযুক্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাঁচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদসহ আরও অনেকে।