সাতক্ষীরায় চাঁদাবাজি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় কথিত সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে আটকের পর জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) রঘুনাথ খাঁকে আটক করে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপর তাকে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে দেবহাটা থানা থেকে সাতক্ষীরা আদালতে পাঠানো হয়।
পুলিশ জানায়, ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা অনুমান ৫টা ৪৫ মিনিটের সময় দেবহাটা থানাধীন খলিসাখালী গ্রামস্থ সাপমারা নামক খালের ব্রিজের উপর কতিপয় দুস্কৃতকারী ব্যক্তিগণ বড়ধরনের অর্ন্তঘাতমূলক কার্যক্রম ঘটানোর জন্য ওই ব্রিজের উপর গাছের গুড়ি দিয়ে চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে অবস্থান করছে। ওই সংবাদ প্রাপ্তির পর দেবহাটা থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুস্কৃতিকারীগণ কয়েকটি বোমা সাদৃশ্য ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঘটনাস্থল হতে পালানোর চেষ্টাকালে জেলার কালিগঞ্জ থানার বিষ্ণুপুর গ্রামের মৃত মদন মোহন খাঁর ছেলে রঘুনাথ খাঁ (৫৭), দেবহাটা থানার ঢেপুখালি গ্রামের মৃত ফজর আলীর গাজীর ছেলে মো: রেজাউল করিম (৬৩), ও একই উপজেলার চালতেতলা গ্রামের নওশাদ আলীর ছেলে মো: লুৎফর রহমান (৪৫)কে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত রঘুনাথ খাঁ বর্তমানে সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া আনন্দপাড়া এলাকার মৃত মোতাক্কাবিরের ছেলে মো: ফারুক হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছে।
কিন্তু অন্যান্য আসামীগণ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ০৫টি বোমা সাদৃশ্য ককটেলসহ বিস্ফোরিত ককটেলের অংশ বিশেষ, কাঠের গুড়ি, লাঠিসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার উপুর্বক জব্দ করেন। বর্নিত বিষয়ে ৩ জন ধৃত ১৫জন পলাতক এবং ২০/২৫ জন অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে দেবহাটা থানার মামলা নং-০৮, তাং-২৩-০১-২০২৩, ধারা-১৯৭৪ সালের দি স্পেশাল পাওয়ার এ্যাক্ট এর ১৫(৩)/২৫-ডি তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলি আইনের ৩/৪/৬ রুজু করা হয়।
এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত আসামি রঘুনাথ খাঁ বেশ কিছুদিন যাবৎ জনৈক মৎস ঘেরের মালিক দেবহাটার শিমুলিয়া গ্রামের কাজী গোলাম ওয়ারেশের ছেলে কাজী সুরুজ ওয়ারেশের নিকট মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল এবং বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২১-০১-২৩ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ৬.১৫টায় রঘুনাথ খাঁ, মো: আনারুল ইসলাম, মোঃ সাইফুল ইসলাম ও মোঃ রফিকুল ইসলাম গাজীরহাট বাজারস্থ বাদীর অফিস কক্ষে গিয়ে ৫লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং ২দিনের মধ্যে তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে ভুমি দস্যুদের দিয়ে বাদীর সকল মৎসঘের দখল করে নেবে মর্মে হুমকি প্রদান করেন। ওই বিষয়ে বাদী থানায় এজাহার দায়ের করলে আসামীদের বিরুদ্ধে দেবহাটা থানার মামলা নং-০৯, তাং-২৪-০১-২০২৩ খ্রিঃ ধারা-৪৪৮/৩৮৫ পিসি রুজু হয়।
ধৃত আসামি রঘুনাথ খাঁর বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজী, দ্রুত বিচার আইন, প্রতারনা মামলা যা-সাতক্ষীরা সদর থানার,এফআইআর নং-৪৮/২০২, তারিখ- ১৫ মার্চ, ২০২০; ধারা-৩৮৫ পেনাল কোড-১৮৬০; কালীগঞ্জ থানার, জিআর নং-১৩৯/০৭, তারিখ-২০ মে, ২০০৭; ধারা-৪০৬/৪২০ পেনাল কোড-১৮৬০; আসামি ২০০৭ সালে মে মাসে তালা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার এর গাড়ি চালক ইমান আলীর নিকট চাঁদা আদায় কালে যৌথবাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়। সাতক্ষীরা সদর থানার, এফআইআর নং-২৬, তারিখ-১৪ মে, ২০০৭; জি আর নং-২৯১/০৭, তারিখ-১৫ মে, ২০০৭; ধারা-৪ আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২ সংশোধনী ২০০৯; এই মামলায় আসামি ০৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত হয়। কালীগঞ্জ থানার মামলা নং-২৭/১৫০, তাং-২৪/০৫/২০০৭, ধারা-৩২৩/৩৪২/৩৮০/৩০৭ পিসি, মামলা নং-২৪/১৪৭, তাং-২২/০৫/২০০৭ ইং, ধারা-৪২০/৪০৬ পিসিসহ বিজ্ঞ আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ মোহাম্মদ ফকরুল আলম খান এবং দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ ওবায়দুল্যাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।