চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডের দেশের একমাত্র জাহাজ ভাঙা শিল্প এখন দুরবস্থা। ডলার সংকটে ব্যাংক এলসি খোলা বন্ধ করে দেওয়ায় অধিকাংশ শিপইয়ার্ড মালিক স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করতে পারছেন না। বেশির ভাগ শিপব্রেকিং ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে একদিকে অর্ধলাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে লৌহ সংকট মোকাবেলায় অন্য দেশের ওপর নির্ভরতা বেড়ে গিয়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। এই শিল্পে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানা গেছে। বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মো. নাজমুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ১২৬টি শিপইয়ার্ডের অনুমোদন থাকলেও বিগত ৮ থেকে ১০ বছর এখানে ৬০-৬৫টি ইয়ার্ডে নিয়মিত জাহাজ ভাঙা হত। কিন্তু বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন মাত্র ৩০টির মতো ইয়ার্ডে জাহাজ ভাঙা হচ্ছে। অন্যান্য মালিকরা তাদের ব্যবসা অনেকটা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এ দিকে শিপব্রেকার্সরা জানান, এই শিল্পের দুর্দিনের কারণে মালিকরা আর্থিকভাবে যেমন বড় ধরনের ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছেন তেমনি কাজের অভাবে শ্রমিকরা এখন দিশাহারা। জানা গেছে, এই শিল্প থেকে সরকার বার্ষিক ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেত। বর্তমানে রাজস্বের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। শিপব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও আরেফিন এন্টারপ্রাইজ শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের মালিক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিগত এক দশকে নানান চড়াই উতরাই পেরিয়ে চলছে জাহাজ ভাঙা শিল্প। এরমধ্যে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই শিল্প। কখনো অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপ, কখনো আন্তর্জাতিক বাজারে লোহার মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিপুল লোকসানের শিকার হয়েছেন মালিকরা। এরমধ্যে করোনা মহামারির সময়কালে ব্যবসা বন্ধ করে রাখতে হয়েছিল দীর্ঘদিন। কিন্তু এলসির বিপরীতে ব্যাংক লোন পরিশোধ বন্ধ ছিল না। বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স অ্যান্ড রি-সাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, ৬০ এর দশকে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট সাগর উপকূলে ঝড়ে আটকে পড়া স্ক্র্যাপ জাহাজ কুইন আল-পাইন ভাঙার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে যে সম্ভাবনার দ্বার খুলেছিল তা সময়ের সঙ্গে বিস্তৃত হয়ে ৮০ এর দশকে একটি লাভজনক শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে তা আরো দ্রুত ছড়িয়ে বর্তমানে সীতাকুণ্ডের কুমিরা পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে এখানে ১৬০টি শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের অনুমোদন আছে। কিন্তু বিগত দিনে করোনা মহামারিসহ নানা কারণে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে অনেক ইয়ার্ডে জাহাজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তা আরো প্রকট হয়। বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইকেলার্স অসোসিয়েশন এর তথ্য মতে ২০১৯ সালে করোনা মহামারির মধ্যেও দেশে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমাদনি হয়েছে ২০৬টি। যার ওজন ছিল ২৩ লক্ষ ৯০ হাজার ৭১৪ কেজি। এর পরের বছর ২০২০ সালে ২২৮টি জাহাজ আমদানি হয়। যার ওজন ২০ লক্ষ ৬৯ হাজার ৬৬৬ কেজি। একইভাবে গত ২০২১ সালের প্রথম আট মাসে ২৮০টি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয়েছে। যার ২৭ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫৯৭ কেজি এবং ২০২২ সালে তার অর্ধেকে নেমে দাঁড়ায় ১৫১টি স্ক্র্যাপ জাহাজে। যার ওজন মাত্র ১১ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫০ কেজি।