রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে মনে হচ্ছিল রাশিয়ার সামনে ইউক্রেন বেশিক্ষণ টিকতে পারবে না, কিন্তু ইউক্রেন রাশিয়াকে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি করেন। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের আট মাস পার হলেও এই যুদ্ধ যেন শেষই হচ্ছে না। আবারও এই যুদ্ধ তীব্রতর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। একদিকে যেখানে ইউক্রেন রাশিয়ার মতো শক্তিশালী দেশকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিয়েছে, সেখানে পুতিনের জন্যও এটি আধিপত্যের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। ক্রিমিয়ার সেতুতে বড় বিস্ফোরণের পর এই যুদ্ধ আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ক্রিমিয়ার সাথে রাশিয়ার সংযোগকারী এই একমাত্র সেতুটিকে পুতিনের স্বপ্নের প্রকল্প হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল। প্রতিশোধ হিসেবে, রাশিয়া জাপোরিঝিয়ার আবাসিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যাতে ১৭ জন নিহত এবং ৪০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে মনে হচ্ছিল রাশিয়ার আগে ইউক্রেন বেশিদিন টিকতে পারবে না, কিন্তু ইউক্রেন রাশিয়ার মতো শক্তিশালী দেশকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। হাজার হাজার রুশ সেনা নিহত হয়। বর্তমানে পুতিন যুদ্ধক্ষেত্রে নানা সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছেন। তিনি তার জেনারেলদের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন বলেও জানা গেছে। পুতিনের এখন একটাই উদ্দেশ্য, তিনি এই যুদ্ধের ভিত্তিতে বিশ্বকে তার দেশের শক্তি দেখাতে চান। এই কারণেই তিনি পিছু হটছেন না যখন রাশিয়া ক্রমাগত তার বিপুল সংখ্যক সৈন্য হারাচ্ছে। এত হতাশার মুখোমুখি হওয়ার পরেও এই লড়াই শেষ হচ্ছে না কারণ পুতিন তার ক্ষমতা দেখাতে চান। রাশিয়া ভেবেছিল ইউক্রেনকে খুব সহজেই হারাতে পারবে, কিন্তু ইউক্রেনের শক্তি বিচারে ভুল করেছে। এ কারণেই এতদিন ধরে এই যুদ্ধ চলছে। রাশিয়ার দুর্বলতা দেখে ইউক্রেন এখন এই যুদ্ধে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুতিন ইউক্রেনের খেরসন, লুহানস্ক, দোনেস্ক এবং জাপোরিজিয়া নামে চারটি অঞ্চল দখল করেছেন। এমতাবস্থায় ইউক্রেন এখন জোর দিয়ে বলছে যে তারা তাদের নিয়ে যাবে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজেই একটি বিবৃতি জারি করে বলেছেন যে ক্রিমিয়া ব্রিজ মাত্র শুরু। অবৈধ সবকিছু ধ্বংস করতে হবে। ইউক্রেন থেকে চুরি হওয়া সবকিছু ফেরত নিতে হবে। রাশিয়ার দখলে থাকা সবকিছুই বিতাড়িত করতে হবে। অন্যদিকে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্যাহত হচ্ছে তেল রপ্তানি। এতে বিশ্বব্যাপী বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। যে কারণে বিশ্বজুড়ে সচেতন মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। তাঁদের শঙ্কা, এ থেকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় কিনা। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটো সরাসরি এ যুদ্ধে জড়ালে ফল হতে পারে ভয়াবহ। তবে তাদের জড়ানোর সম্ভাবনা কম। আবার একেবারে নেই, এটা বলা যাচ্ছে না। ইউক্রেন যুদ্ধ কবে শেষ হবে, এ নিয়ে বিশ্লেষকরা নানা মত দিয়েছেন। ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টোলটেনবার্গ বলেছেন, এ যুদ্ধ বহু বছর ধরে চলতে পারে। তবে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, কয়েক মাসের মধ্যেই রাশিয়ার লড়াই-সক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে, অর্থাৎ যুদ্ধ থেকে কয়েক মাসের মধ্যেই সরে আসতে পারে মস্কো। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছিলেন, ২০২৩ সাল পর্যন্ত চলবে এ যুদ্ধ। বিশ্বে শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নতি বজায় রাখতে যত দ্রুত সম্ভব এই যুদ্ধ শেষ করতে হবে। তা না হলে বিশ্বকে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।