দিনাজপুরের চিরিরবন্দর ও সদর উপজেলার তীর ঘেঁষে প্রবাহিত হওয়া আত্রাই নদী, চিরি নদী ও কাঁকড়া উপর নির্মিত ৩টি রাবার ড্যাম ফুটো হয়ে পানি আটকাতে না পেরে হাজার হাজার কৃষক শুকনো মৌসুমে তাদের বোরো ক্ষেতে সেচ দিতে না পেরে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
জানা গেছে সাঁইতাড়া রাবার ড্যাম, চিরি নদীর মিনি রাবার ড্যাম ও মোহনপুর রাবার ড্যামের মধ্যবর্তী প্রায় ২২ কিলোমিটার এলাকার কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে আবারও বোরো চাষ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
চিরিরবন্দর রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি শাহজাহান আলী জানান, চিরিরবন্দর উপজেলা আত্রাই ও কাঁকড়া নদীর দুই পাড়ের বিস্তীর্ণ মাঠ প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও সদর উপজেলার মোহনপুর রাবার ড্যামের মাধ্যমেও ৫ শত হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা হয়েছে। রাবার ড্যামের তিনটি পাইপের মধ্যে দুটি পাইপ ফুটো হলে দুটি ফুটো পাইপ মেরামত করে সচল করা হলেও কৃষকের সেচের উপকারে আসে নাই। বর্ষা মৌসুমের রাবার ড্যামের পানি আটকিয়ে রাখলেও ইরি বোরো শুকনা মৌসুমে আবার ওই দুটি পাইপ ফেটে যায়। ফলে পুনরায় ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারো কৃষক। একই অভিযোগ করেন মোহপুর রাবার ড্যামের সমবায় সমিতির সদস্যরা। তারা আরও অভিযোগ করেন গত দুই বছর ধরে মোহনপুর রাবার ড্যাম বিদ্যুত বিল বকেয়া এবং রাবার ড্যামের পাইপ ফুটো। কতৃপক্ষকে বারবার অভিযোগ বা জানালেও তারা সময় ক্ষেপন করছেন।
জয়পুর গ্রামের কৃষক ও শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, মর্টারের পানি নিয়ে জমিতে ধান লাগিয়েছি। কিন্তু এখন জমিতে ঘাস মারা ওষুধ দিতে পারছিনা পানের অভাবে। যেখানে অল্প খরচে সহজে পানি পেতাম, সেখানে ড্যাম ফুটো হওয়াতে পানির অভাব দেখা দিয়েছে।
জয়পুর কাঁকড়া নদীর বিএডিসি সেচ পাম্পের পরিচালক রবিউল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, নদীতে পানি না থাকায় কৃষকরা সবসময় বিরক্ত করছে। নদীতে পানি না থাকায় পানি দিতে পারছিনা। নদীতে কখনো পানি থাকে আবার কখনো সাত থেকে আট দিন পানি নাই তখন পাম্প বন্ধ করে রাখতে হয়। আমি বিষয়টি কতৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
ভিয়াইল হালকা সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার বলেন, আমাদের এই সেচ প্রকল্প দিয়ে প্রায় ৬০০ একর জমিতে পানি দেই। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মোহনপুর রাবার ড্যামের নানা সমস্যায় আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। এরা বর্ষা মৌসুমে রাবার ফুলে পানি আটকে রাখে জলমহাল কে মাছ ধরার সুবিধা দেয় আবার শুকনা মৌসুমে রাবারের পাইপ নাকি ফুটা হয় কারেন্ট বিল বাকি থাকে বেলুন ফুলাতে পারে না। একই অভিযোগ ভিয়াইল হালকা সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সকলের।
মোহনপুর রাবার ড্যামের পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বলেন, আমি গত ২১ সালে জানুয়ারি মাসে দায়িত্ব নিয়েছি। তখন দেখি ড্যামের বিদ্যুৎ বিল বাকি। পাইপে ফুটো আছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে গত মৌসুমের শেষ দিকে ঠিক করা হয় কিন্তু এবার পুনরায় পাইপ ফুটো হয়েছে। কৃতৃপক্ষকের সাথে গত এক মাস ধরে আলোচনা চলছে তারা দ্রুত ঠিক করে দিবে জানিয়েছে।
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা শারমিন বলেন, মোহনপুর রাবার ড্যামটি সদর উপজেলার অন্তগর্ত হলেও এর উপকার ভোগী কৃষকের সংখ্যা চিরিরবন্দর উপজেলার বেশি। গত দুই বছর ধরে মোহনপুর রাবার ড্যামে পানি আটকানো যাচ্ছে না। বেলুনের পাইপ নষ্ট থাকায় কৃষকের অভিযোগের পর আমি বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছি বিষটি দ্রুত সমাধান করা হবে। এছাড়াও চিরিরবন্দর উপজেলার সাঁইতাড়া ইউনিয়নের কাঁকড়া নদীতে নির্মিত দেশের ২য় বৃহত্তম রাবার ড্যাম ও চিরি নদীতে নির্মিত মিনি রাবার ড্যামগুলিও ফুটো হয়ে যাওয়ায় কৃষকের চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছে। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সমস্যা সমাধান করা হবে।
উল্লেখ্য শুকনো মৌসুমে কৃষকের বোরো ধান আবাদের জন্য পানির সুবিধার্থে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাঁইতাড়া ইউনিয়নে কাঁকড়া নদীতে ২০০১ সালে একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করে। ২০০৪ সালে উপজেলার মধ্যবর্তি কৃষকদেরও সুবিধার্থে চিরি নদীতে মিনি রাবার ড্যাম এবং একই কারণে ২০১৩ সালে সদর উপজেলার মোহনপুর গ্রামে আরও একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়।