পুঠিয়ায় বানেশ্বর হাটে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ক্রেতাবিক্রেতারা ময়লা আবর্জনা দুর্গন্ধে নাক মুখ বেঁধে হাটে কেনাবেচা করার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সরকার প্রতিবছর হাট হতে ১ কোটির অধিক টাকা রাজস্ব আয় করছে। অপরদিকে উপজেলার কোনো হাট-বাজারগুলোতে পশুর বর্জ এবং আবর্জনা ফেলার কোনো নিদিষ্ট জায়গা নেই। অথচ সরকার হাট-বাজারগুলো হতে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করছে। গত বছর শুধুমাত্র বানেশ্বর হাট ইজারা হয়ে ছিল, ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা দিয়ে। চলতি বছরে আবারও হাটটি ইজারা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী হাট-বাজার হতে যে আয় হবে তার ১৫ শতাংশ সংশ্লিষ্ট হাটের কাজে উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করতে হবে। কিন্তু উপজেলার বেশিরভাগ হাট-বাজারে ১৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করার হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। বানেশ্বর হাটের ইজারাদার ওসমান আলি বলেন, হাটের উন্নয়নের কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হলে, একজন আরেক জনকে বলার কথা বলেন। আমার জানা মতে ৭৮ লাখ টাকা হাট-বাজারের রাজস্ব টাকা অলস অবস্থায় উপজেলায় পড়ে রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বানেশ্বর হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সদন্য বলেন, একজন প্রভাবশালী নেতাকে হাটের লাভের ২ শতাংশ কমিশন চেয়ে ছিল। আমরা না দেওয়ার জন্য হাটের উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে না। বানেশ্বর হাটের মাংস বিক্রেতারা বলছে,জবাইকৃত পশুর বর্জ আবর্জনা কোনো নিদিষ্ট স্থানে ফেলার জায়গা নেই। দুর্গন্ধের ভেতর জীবন-জীবিকার তাগিদে হাটে মাংস বিক্রি করতে হচ্ছে।আমাদের মাংস বিক্রেতাদের অনেকেরই ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। হাটের আশেপাশের বসবাসকারীদের অনেকের প্রতিনিয়ত পরিবেশ দুষিত হওয়ায়,দেহে বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে বলে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। উপজেলাবাসীদের অভিযোগ,শুধুমাত্র কর্তৃপক্ষের নজরদারীর ও অহেলার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা ও পৌরসভা মিলে ছোট বড় মোট ৮টি হাট রয়েছে। বাজার রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধি। কোনো হাট-বাজারে সরকারি ভাবে কিংবা বেসরকারি ভাবে কোনো নির্দিষ্ট ভাবে ময়লা, পশুর বর্জ, আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই। কিন্তু যাদের এগুলো দেখার দায়িত্ব দেওয়া আছে। তারা হলো, উপজেলা স্বাস্থ্য স্যানেটারি পরিদর্শক ও পৌর স্বাস্থ্য স্যানেটারি পরিদর্শকরা। তারা জবাইকৃত পশুর স্বাস্থ্য সঠিক আছে বলে ছিলছাপ্পর দিয়ে টাকা নেওয়ার জন্য কশাইদের কাছে বসে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু পশু জবাই করার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নীরিক্ষার করার দায়িত্ব উপজেলা পশুপালন অফিসের। উপজেলার মানুষের অভিযোগ,অবহেলার কারণে শুধুমাত্র যেখানে সেখানে পশু জবাই হয় এবং কশাইরা ময়লা, বর্জ আবর্জনাগুলো নির্দিষ্ট স্থানে গর্ত করে মাটিচাপা না দেওয়ায়,প্রতিনিয়ত পরিবেশ দুষিত হয়ে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পুঠিয়া উপজেলার বৃহত্তম বানেশ্বর হাট শনিবার, মঙ্গলবার হাটবার বসে। হাটটি ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশ্বে হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতা সবসময় বেশি হয়ে থাকে। হাটের দুইদিন প্রায় অর্ধশত গরু, মহিষ, ছাগল জবাই করা হয়ে থাকে। এইসব জবাইকৃত ময়লা পশুর বর্জ আবর্জনা খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হয়। এতে আশপাশের পরিবেশ দুষিত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। হাট করতে আশা ক্রেতা-বিত্রেুতারা মাংস হাটার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। হাটে ব্যবহায়ীদের মধ্যে অনেকে মাংস হাটার আশপাশে বেচাকেনা করতে অনিহা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। মাছ ব্যবসায়ী আমিনুল শাহজাহান শাহারুলদের অভিযোগ, একটু বৃষ্টি হলে মাছ হাটে বিভিন্নরকম পোকা কিলবিল করে। বর্ষা এলে পোকার কামড় খেতে হয়। মাংস বিক্রেতা আলঙ্গীর মাহাবুল হযরত আলী জানান, বাংলাদেশের ভেতর সবচেয়ে নোাংড়া হাট হলো বানেশ্বর। পুঠিয়া সদর, পুঠিয়া পাঁচআনী বাজার, মোল্লাপাড়াহাট, ধোপাপাড়া বাজার, সাধনপুরহাট, পৌরসভার ভেতরে ঝলমলিয়াহাটসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে পশু জবাইকৃত বর্জ আর্বজনা খোলা আকাশের নীচে পরে থাকতে দেখা যায়। বানেশ্বর হাটের কশাইরা বলেন, উপজেলা স্যানেটারি পরিদর্শক হাটের দিনে টাকা নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ যুগান্তরকে বলেন,আগামীতে মাংস পট্টি ময়লা আবর্জনার জায়গাটিতে একটি ডেন নির্মাণ করে দিলে আর আবর্জনা ও দুর্গন্ধ থাকবে না। আগামীতে বানেশ্বর হাটে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে।