পাবনার চাটমোহর উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের দাঁথিয়া কয়রাপাড়া গ্রামের ইস্কান্দার আলী গং একই গ্রামের আঃ মজিদ গং'র ভোগদখলীয় জমিতে ফসলের আবাদে বাঁধা দেওয়াসহ জোরপূর্বক জমি জবরদখলের অপচেষ্টা করছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সাথে তারা হাঙ্গামা সৃষ্টিসহ মিথ্যে মামলা-মোকদ্দমা দায়ের করে আঃ মজিদের পরিবারকে হয়রানীও করছে বলে অভিযোগ। সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে ইস্কান্দার আলী গং জমি জবরদখল করতে গেলে আঃ মজিদ গং বাধা দেয়। কিন্তু ইস্কান্দার গং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষকে তাড়া করে। পরে আঃ মজিদ থানা পুলিশে ভবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যরা পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন দাঁথিয়া কয়রাপাড়া গ্রামের আক্কাস আলী মোল্লার ছেলে মোঃ কেসমত আলী (৩৫),আকবর আলী মোল্লার ছেলে মোঃ বজলুর রহমান (৪০) ও ইমান আলীর ছেলে আমজাদ হোসেন (৩৭)।
চাটমোহর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন জানান,অন্যের জমিতে অবৈধ অনুপ্রবেশ,মারধর ও হুমকির অভিযোগে ৩জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এলাকায় বর্তমানে শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থ গ্রহণ করা হচ্ছে।
এদিকে আঃ মজিদ অভিযোগ করে জানান,বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও প্রায় একশ’ বছরের বেশি সময় ধরে ভোগ দখলে থাকা জমি প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে আমরা চাষাবাদ করতে পারছিনা। ফলে দীর্ঘদিন যাবত প্রায় ১৮ বিঘা জমি অনাবাদী পরে রয়েছে। এ অবস্থায় প্রতিপক্ষ আজ জমি জবরদখলে অপচেষ্টা করে।
উপজেলার দাঁথিয়া কয়রাপাড়া গ্রামের ভূক্তভোগি আবদুল মজিদের অভিযোগ তারা ১৯২৬ সাল থেকে পৈত্রিকভাবে প্রাপ্ত জমি ভোগ দখল করে আসছেন। তাদের স্বপক্ষে সকল বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। সেই জমির মধ্যে নিজেদের ওয়ারিশ দাবি করে ১৯৮৫ সালে আকবার মোল্লার ছেলে এস্কেন্দার আলী একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ওই জমির মালিকদের মধ্যে তারা ওয়ারিশ নন বিষয়টি প্রমাণিত হলে মামলা খারিজ করেন আদালত।
অত:পর এস্কেন্দার গং ১৯৯২ সালে অপর আরেকটি মামলা দায়ের করেন। ১৯৯৩ সালে এ নিয়ে স্থানীয় শালিস বৈঠকে মানবিক কারণে তাদের ১ একর ৬৩ শতক জমি দিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়। কিছুদিন পর স্বাক্ষর জাল করে এস্কেন্দার গং ৪ একর ১৭ শতক জমি তাদের নামে খারিজ করে নেন। এ বিষয়টি জানার পর আবদুল মজিদ গং চাটমোহর সহকারী কমিশনার (ভুমি) আদালতে মিসকেস মামলা দায়ের করেন। সেখানে জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি প্রমাণিত হলে এসকন্দোর গংয়ের খারিজ বাতিল হয়ে যায়।
১৯৯৮ সালের ১১ আগস্ট এস্কেন্দার আলীর মাতার মৃত্যু হলেও ১৯৯৯ সালে মৃত মা কে জীবিত দেখিয়ে তাকে বাদী করে সুকৌশলে একটি মামলা করেছিলেন এস্কেন্দার আলী। বাদী মৃত ব্যক্তি হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হলে ২০০৫ সালের ২৮ আগস্ট বিচারক ওই মামলাটিও খারিজ করে দেন।
আব্দুল মজিদ বলেন, এস্কেন্দার আলী গং এভাবে বছরের পর বছর একের পর এক মিথ্যে মামলা দায়ের করে তাদের পরিবারের সদস্যদের হয়রানী করে আসছেন। তারা গায়ের জোড়ে জমি নিজেদের দাবি করে জমি চাষ করতে দিচ্ছেন না। এ নিয়ে অনেকবার হামলা করে আমাদের পরিবারের লোকজনকে মারপিট করে আহত করেছে। এমতাবস্থায় প্রায় ১৮ বিঘা জমি চাষ করতে পারছিনা। ইতোমধ্যে জমি অনাবাদি থাকায় কয়েক লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে একই গ্রামের বাসিন্দা এস্কেন্দার আলী জানান, আদালতে তিনি আপিল করেছেন। জমি কে পাবে তা নির্ধারণ করবে আদালত। তবে,আপিল করেছেন বলে জানালেও আপীলের স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। জমি জবরদখলের বিষয়ে তিনি কোন কথা বলেননি।
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন,আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে আমরা চেষ্টা করছি। যাতে কোনো ঝামেলা না হয়।