১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স ডে, যে দিনটিকে বিশ্বব্যাপী ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধুবান্ধব, স্বামী-স্ত্রী, মা-সন্তান, ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ মানুষেরা এই দিনে একে অন্যকে তাদের ভালোবাসা জানায়। প্রতি বছর এ দিনে অনেক দেশের মতই বাংলাদেশেও উদযাপন করা হয় এ ‘ভালোবাসা দিবস’। রাষ্ট্রীয়ভাবে এর স্বীকৃতি না থাকলেও সরকারি বিধিনিষেধ না থাকায় এর জনপ্রিয়তা এখন আকাশছোঁয়া। তবে বিশ্বের অনেক দেশ রয়েছে, যারা নিজেদের দেশে ভালোবাসা দিবস পালন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্ম দিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জা অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা বিরত থাকে না। খ্রিস্টীয় চেতনা ভ্যালেন্টাইন দিবসের কারণে বিনষ্ট হওয়ার অভিযোগে ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার ভ্যালেন্টাইন্স উৎসব নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিক ভাবে এ দিবস উৎযাপন করা নিষিদ্ধ করেছিল। এ ছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবসটি জনগণ ও সরকারিভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। অনেক মুসলিম দেশ রয়েছে যেখানে দিবসটি পালনে বিশেষ নিষেধ রয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তানেও ২০১৭ সালে ইসলামবিরোধী হওয়ায় ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করে সেদেশের আদালত। রোমের সম্রাট ক্লডিয়াস ২০০ খ্রিস্টাব্দে দেশে বিয়ে প্রথা নিষিদ্ধ করেন। তিনি ঘোষণা দেন, আজ থেকে কোনো যুবক বিয়ে করতে পারবে না। যুবকদের জন্য শুধুই যুদ্ধ। সম্রাট ক্লডিয়াসের এ অন্যায় ঘোষণার প্রতিবাদ করেন এক যুবক। যার নাম ভ্যালেন্টাইন,অসীম সাহসী এ যুবকের প্রতিবাদে ক্ষেপে উঠেছিলেন সম্রাট। রাজদ্রোহের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা মাথা কেটে ফেলা হয় তার। ভালোবাসার জন্য ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে এ দিনটিকে পালন করা হয় ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে। ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয় বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে নেওয়া হয় ব্যাপক প্রস্তুতি,তবে দেশের সব ধরণের মানুষের মধ্যে ভালোবাসা দিবস পালনের প্রবণতা দেখা যায় না। তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীরা এ দিনটিকে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করে। এ দিনেই প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে তারা বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করে ও ভালবাসার কথা জানায়। আবার ভালোবাসা দিবসে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনার খবরও শোনা যায়,যা সমাজের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এসব ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যে একজন নারীর স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়ে যায়। এ দিবসে অন্যান্য ফুলের তুলনায় গোলাপ ফুলের চাহিদাও বেড়ে যায় অনেক বেশি। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফুল ব্যবসায়ীরা প্রতিটি গোলাপের মূল্য বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়,৫ টাকার গোলাপ কিনতে হয় ৫০ টাকায়। নির্দিষ্ট দিনে পালন করেই ভালোবাসার প্রকৃত স্বাদ পাওয়া সম্ভব নয়,তাই সমাজের সকলের উচিত নিজ নিজ পরিবারের মা, বাবা, ভাই-বোন এবং সমাজের অবহেলিত মানুষকে ভালবাসা। যে ভালবাসার মধ্য দিয়ে সকলের মাঝে সুখ ও শান্তি বিরাজ করে। যে ভালবাসার মধ্য দিয়ে নিজ পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাঁতি সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।