গত ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বগুড়া সারিয়াকান্দির ২ ইউনিয়নের ৫ টি মৌজার ২ হাজার ৭৫ একর জমি জামালপুরের সীমানা সংযোজন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গত ২ ফেব্রুয়ারী সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। দায়ের করেছেন বগুড়া সারিয়াকান্দির কাজলা ইউপির চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এ এস এম রফিকুল ইসলাম। এছাড়াও এমন হঠকারি সিদ্ধান্ত নেয় সংশ্লিষ্ট এলাকার লোক জনের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন বংশ পরমপরায় আমরা বগুড়ার জেলা সীমানায় রয়েছি, আমরা চিরদিন এখানে থাকতে চাই। সরকারের উচ্চ মহলে এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি করছেন এলাকার লোকজনেরা।
অধ্যক্ষ এ এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, এর আগে জামালপুর ও বগুড়া জেলার সীমানা নির্ধারণ সম্পর্কিত দুইটি রায় আমাদের বগুড়ার পক্ষে রয়েছে। এ রায়গুলোকে তোয়াক্কা না করে কারো ব্যক্তিগত কালোহাতের হস্তক্ষেপে নিকারের বৈঠকে জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তা চ্যালেন্জ করে আমি মাননীয় সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করেছি। ১৯২৭ সালের ময়মনসিংহ বিভাগের ওভাররাইট বা ট্যামপারিং করা নকশা দিয়ে জমির জরিপকাজ পরিচালনা করে সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে। জমির জরিপকাজের সময় আমাদের রাজশাহী বিভাগের নকশা ব্যবহার করা হয়নি। তাছাড়া জরিপকাজের সময় আমাদের বগুড়া জেলার কাউকে রাখাও হয়নি। আমরা মনে করি এটি একটি মনগড়া সিদ্ধান্ত। জামালপুরের মাদারগঞ্জ এলাকার সাংসদ মির্জা আজম প্রভাব খাটিয়ে নিকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এলাকার কেউই এ সিদ্ধান্ত মানতে চাননা।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী আমান ফেরদৌস বলেন, মামলার শুনানির তারিখ এখনো পাওয়া যায়নি। কোনো কালো হাতের হস্তক্ষেপে সুনির্দিষ্ট যৌক্তিকতা ছাড়াই এক জেলা হতে বিশাল আয়তনের জমি অপর জেলায় পার করা হয়েছে। যেহেতু সিএস জরিপে এ জমি বগুড়া জেলার অন্তর্ভুক্ত, তাই এ এলাকার শত বছরের ইতিহাসও বগুড়ার। তাই সুনির্দিষ্ট যৌক্তিক কারণ ছাড়াই এক জেলার বিশাল আয়তনের এলাকা অন্য জেলায় সংযোজন করার কোন নিয়ম নেই। আশা করছি মাননীয় উচ্চ আদালত বিষয়টি অনুধাবন করে আমাদের পক্ষে রায় দেবেন।
নিকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জামালপুরের মাদারগঞ্জে সংযোজন হয়েছে ২ টি ইউনিয়নের মৌজায় বসবাসরত ২ হাজার ৫০ টি পরিবারের ১০ হাজার জনসংখ্যা। সারিয়াকান্দি উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের জামথল মৌজার সম্পূর্ণ ১২০০ একর জমি ও ১ হাজার ৫০০ টি পরিবারের ৬ হাজার ৫০০ জনসংখ্যা, টেংরাকুড়া মৌজার আংশিক ৩০০ একর জমি ও ৩৫০ টি পরিবারের ২ হাজার জনসংখ্যা, বেড়াপাঁচবাড়িয়া মৌজার আংশিক ১৭৫ একর জমি ও ২০০ টি পরিবারের ৫০০ জনসংখ্যা, পাকুড়িয়া মৌজার আংশিক ১৫০ একর জমি ও ১৫০ টি পরিবারের ৩০০ জনসংখ্যা এবং কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের ছোনপচা মৌজার ২৫০ একর জমি ও ২৫০ টি পরিবারের ৭৫০ জনসংখ্যা বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলা হতে জামালপুরের মাদারগন্জে সংযোজন হয়েছে।
উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন দিপন বলেন, আমাদের বাপ দাদা চৌদ্দ পুরুষের ঠিকানা, জমিজমার কাগজপত্র সব বগুড়া সারিয়াকান্দির নামে। হঠাৎ করে এই ইউনিয়নের কিছু মৌজা জামালপুর মাদারগঞ্জের মধ্যে কেটে যাওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। এলাকাবাসী তাদের বাপ দাদাদের বসতভিটা বগুড়া সারিয়াকান্দির মাঝেই রাখতে সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।