সমাজে প্রতিবন্ধীরা নানাভাবে অবহেলার শিকার হয়ে থাকে। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী শিশুরা ব্যাপক বৈষম্য ও কুসংস্কারের শিকার হয়। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ বা কর্মক্ষেত্রের বৈষম্যই মূল। সমাজের অনেকের ধারণা প্রতিবন্ধীত্ব একটি অভিশাপ বা এটি একটি পাপের শাস্তি স্বরূপ হয়েছে। ফলে সবাই তাদের অবহেলার দৃষ্টিতে দেখেন। সমাজে বসবাসরত মানুষদের মধ্যে পৃথক পৃথক সত্ত্বা বিদ্যমান। অভ্যন্তরীণ গুণাগুণ, দোষ-ক্রটি ছাড়া বাহ্যিকভাবেও রয়েছে অনেক পার্থক্য। মানুষের মধ্যে রয়েছে লম্বা-খাটো, সাদা-কালো। আবার অনেকেই আছেন যাদের কারো হাত নেই, কারো পা নেই, কারো আবার দৃষ্টি শক্তি নেই। আবার অনেকে কানে শোনে না কথাও বলতে পারে না। সমাজে এসব মানুষ হলো ব্যতিক্রম। এদেরকে সাধারণভাবে প্রতিবন্ধী বলা হয়। প্রতিবন্ধী ও অটিজম শিশুদের নিয়ে এখন সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘও এখন এ বিষয়ে একটি রেজুলেশন গ্রহণ করেছে। কিন্তু ইউনিসেফ ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে উঠে এসেছে যে বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী শিশুদের অর্ধেকের বেশি কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পায় না। জরিপ বলছে, পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে মাত্র ৬৫ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং মাত্র ৩৫ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নথিভুক্ত আছে। মোট ৬০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে রয়েছে। যেসব শিশু স্কুলে যাচ্ছে, বয়স অনুযায়ী অন্য শিশুদের তুলনায় তারা শিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে। আবার দেখা যায় স্কুলে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সুযোগ-সুবিধার অনেক অভাব আছে। যেমন শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ লাগে, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুর জন্য ব্রেইল লাগে। স্কুলে এগুলোর অভাব আছে। আবার অনেক স্কুলে প্রতিবন্ধী শিশু নিতে চাইলেও অন্য অভিভাবকরা নানারকম চাপ তৈরি করেন। বর্তমান সরকার কয়েক বছর ধরে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসার বিষয়ে জোর দিচ্ছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে ২০১৩ সালে একটি আইন করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩-তে সকল প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তির অন্য নাগরিকের মতো সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে সে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের দেশে মূলত প্রতিবন্ধীরা পারিবারিকভাবেই বেশি অবহেলার শিকার। সেজন্য পরিবারের সবাই যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে প্রতিবন্ধী শিশুরা বেড়ে উঠবে যতেœর সঙ্গে। প্রয়োজনে বাবা-মাকে শিশুর বেড়ে ওঠার প্রতিটি মুহূর্ত মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করতে হবে। এ ছাড়া শিশুর আবেগ বা অন্যান্য কার্যক্রম বোঝার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিবন্ধী শিশুদের বাদ দিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব এসব শিশুকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসার পদক্ষেপ জোরালো করা প্রয়োজন। এসব শিশুকে সমন্বিত শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে যদি আমরা সঠিকভাবে, উপযুক্ত সময়ে পরিচর্যা করতে পারি তাহলে তারা সমাজের বা দেশের বোঝা হবে না বরং সম্পদ হবে।